রংপুরে হাইটেক পার্ক আটকে আছে তরুণদের স্বপ্ন

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

রিজু সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি:

রংপুরে প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণরা হাইটেক পার্কে নিজেদের কর্মসংস্থান হবে বলে স্বপ্ন বুনেছিলেন। নিজেদের তৈরি প্রযুক্তি রপ্তানি করে রংপুর তথা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তারা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারণ তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ। গত ৭ বছরে মাত্র ২৫ ভাগ কাজ করে উধাও ঠিকাদার। এতে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। রংপুর হাইটেক পার্কের ব্যয় ধরা হয় ১৫৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খলিশাকুড়ি এলাকায় ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সাইনবোর্ডেই ঝুলে ছিল নির্মাণকাজ। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস করা হয়। কিন্তু তখনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২২ সালের মে মাসে হাইটেক পার্কের কাজের উদ্বোধন করা হয়। এই মেয়াদে কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। এ সময়ের মধ্যে মাত্র ২৫ ভাগ কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাইটেক পার্কের পুরো এলাকা ঘিরে রেখে বালু রাখা হয়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য নির্মাণসামগ্রী। অলস পড়ে আছে ক্রেনসহ ভারী সব যন্ত্রপাতি। পুরো এলাকায় আছেন হাতে গোনা কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী। লিশাকুড়ি এলাকার দেবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘জমিগুলো নিয়ে বালু ফেলে রেখেছে। কতদিনে বিল্ডিং হবে, বুঝতে পারছি না। নাকি এমনই থাকবে। এটা নির্মাণ হলে আমাদের জন্য ভালোই হবে।’নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক বলেন, ‘সবশেষ কাজ হয়েছে গত বছরের ২ আগস্ট। আওয়ামী সরকার পতনের পর কাজ বন্ধ করে চলে গেছে ভারতীয় ঠিকাদার। কবে কাজ শুরু হবে জানি না। এখানে চার ভাগের এক ভাগ কাজ হয়েছে। মালামাল আনা হয়েছে। আমরা চার-পাঁচজন নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। এগুলো দেখভাল করছি।’এ প্রসঙ্গে রংপুরের তরুণ উদ্যোক্তা ইনবক্স আইটি সলিউশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবু সায়েম বলেন, ‘রংপুরের তরুণদের জন্য হাইটেক পার্ক ছিল এক স্বপ্ন। যেখানে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় প্রযুক্তি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করবে। কিন্তু নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতায় এ স্বপ্ন এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। রংপুরের তরুণরা শুধুই প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় থাকতে পারে না। আমরা চাই, হাইটেক পার্কের কাজদ্রুত শেষ হোক এবং প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হোক।’বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ হাসান বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে এআই প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত, আমরা তখন পাঠ্যবইয়ে এইচটিএমএল, সিএসএস নিয়ে পড়ে আছি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উদ্ভাবন, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন ব্যবহারিক শিক্ষার। এ ক্ষেত্রে হাইটেক পার্কের বিকল্প নেই। রংপুরের এই হাইটেক পার্ক চালু হলে প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে আমরা বিশ্ববাজারে আমাদের নিজস্ব প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারব।’রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। ফলে রংপুরের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। রংপুরে তরুণ সমাজকে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। তা না হলে শিক্ষিত তরুণদের জ্ঞান কাজে লাগানো সম্ভব হবে না বরং বেকারত্ব বাড়বে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, ‘হাইটেক পার্ক হলে আমরা টেকনলোজিতে এগিয়ে যেতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আইটি খাতে গবেষণার সুযোগ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবের যে সংকট আছে, তা পূরণ করা যাবে। এ ছাড়া রংপুর অঞ্চলের তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তাই কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।’রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘হাইটেক পার্কের কাজ শুরু করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *