চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ সোমবার অথবা ১ এপ্রিল মঙ্গলবার উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। সময়ের হিসাবে ঈদের বাকি আছে মাত্র ৯/১০ দিন। তাই সবাই নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন জেলা শহরের বিভিন্ন শপিং মলে। শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা যায়, এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি পোশাক সারারা-গারারা। তবে শাড়িপ্রেমীদের কাছে ভারতীয় শাড়িই পছন্দ।
বিক্রেতারা জানান, এখনও পর্যন্ত দিনের বেলা ক্রেতার আনাগোনা তেমন নেই। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ে। শহরের আর এম.সি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ড, নন-ব্র্যান্ড ও চায়না থেকে আমদানি করা জুতা কসমেটিকস ও জুয়েলারির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। ছেলে ও মেয়েদের নন ব্র্যান্ডের জামাকাপড় ও শাড়িসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাকের দোকানেও ভিড়। এসব দোকানে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে সব জিনিস পাওয়া যায়। এজন্য ভিড়ও বেশি। বিদেশী ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে রয়েছে পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের তৈরি পোশাক। উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা ভিড় করেন এসব দোকানে।
রংপুরের সেন্ট্রাল রোড কাপড় পট্টি এলাকা ঘুরে জনতা ট্রেডিং, মদিনা গার্মেন্টস, ব্রাদার্স ট্রেডিংসহ বিভিন্ন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর সরকার পরিবর্তনের পর বেচাকেনা কমেছে অনেকটা। তারা মনে করেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও আগের সময়ের নেতারা যাদের বেতনের বাইরেও ইনকাম ছিল তাদের অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এখন বাজারে কম আসছেন। এছাড়া মানুষজন খুব হিসাব করে খরচ করছেন।’মিথিলা গার্মেন্টস এর বিক্রেতা মেহেদি হাসান লিটন বলেন, ‘আগের বছরগুলোতে প্রশাসন বা সরকারি কর্মচারী, নেতাকর্মী ছিল তারা কিনে নিয়ে যেতেন। এমনও হতো, একজনই ২০ হাজার টাকার পোশাক কিনতেন। এ বছর সেরকম ক্রেতা পাচ্ছি না। সবদিক থেকেই ক্রেতা কমেছে। শিশুদের জামাকাপড় বিক্রি এসময়ে শেষপর্যায়ে থাকে। এ বছর সবই রয়ে গেছে।’
বিক্রেতারা জানান, এ বছর বাজারে পাকিস্তানি পোশাকের চাহিদা বেশি। সিল্ক, জর্জেট ও অরগ্যাঞ্জা কাজের বিভিন্ন পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। পাশাপাশি পাকিস্তানি এসব পোশাকের মাস্টার কপিও পাওয়া যাচ্ছে। যার মূল্য আড়াই থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে।
রংপুর সুপার মার্কেটের সেঁজুতি এক্সক্লুসিভ-এর বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, ‘এ বছর পাকিস্তানি পোশাক ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ক্রেতার উপস্থিতি অনেক ভালো। এজন্য রাত একটা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে।’সেঁজুতি শাড়ী ঘরের বিক্রেতা মুসলিম মিয়া বলেন, ‘ভারতীয় তানা বানা কাতান শাড়ি ও পাকিস্তানি থ্রি-পিস, সারারা-গারারা ও লাক্সারি শিপনসহ অন্যান্য পোশাকের চাহিদা বেশি। এসব পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে।’
সেঁজুতি বস্ত্র বিপনীর কর্মচারী শাওন জানান, ‘পাকিস্তানি আগা-নূর, সাদাবাহার ব্র্যান্ডের পোশাক ৫ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। লাক্সারি শিপন, জর্জেট, অরগ্যাঞ্জা কাপড় দিয়ে এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে।’পাকিস্তানি পোশাক কিনতে এসেছেন তানিয়া ইসলাম । তিনি বাসসকে বলেন, ‘সবার মুখে এখন পাকিস্তানি পোশাকের নাম। তবে দাম অনেক বেশি। সবার পক্ষে কেনা পসিবল না। এখানে কালেকশন ভালো আছে। দামে মিললে নেবো।’নগরীর সালেক মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আসা শামছুল ইসলাম বলেন, ‘সব ধরনের কাপড়ের দাম অনেক বেশি । ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও চাহিদামত ছেলে মেয়েদের কাপড় কিনতে পারছি না।’ পায়রা চত্বরে স্ত্রীসহ পরিবারের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন শিক্ষক মনিরুজ্জামান। তিনি বাসসকে বলেন, ‘মেয়ের জন্য জামা কিনলাম। পছন্দ তেমন হয়নি, তাও দাম ২৭০০ টাকা। ছেলের জামা কাপড় এখনও কিনতেই পারি নাই । যে দাম তাতে আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদ যেন ফিকে হয়ে গেছে।’দিনের চেয়ে রাতে ঈদের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি। তাই ঈদ বাজারকে সামনে রেখে জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বাসসকে বলেন, ‘ঈদ কে সামনে রেখে নগরীর সব মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’