রংপুরের ২৭১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

রিজু সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি

রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭১টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাহত হচ্ছে। রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৭১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কাউনিয়ায় ১২টি, পীরগঞ্জে ৩৭টি, গঙ্গাচড়ায় ১২টি, তারাগঞ্জে আটটি, পীরগাছায় ৫৬টি, বদরগঞ্জে ৩৩টি, মিঠাপুকুরে ৮৮টি এবং রংপুর সদরে ২৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগবিধি অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ ও ৬৫ শতাংশ সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের নিয়ম রয়েছে। সম্প্রতি পদোন্নতির মাধ্যমে শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এতে বিদ্যালয়গুলো কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। চলতি দায়িত্বে কিছু সহকারী শিক্ষক নিয়োজিত থাকলেও কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী পদোন্নতির কাজ চললেও, শিক্ষকরা বলছেন, অবসরের তুলনায় পদোন্নতি ও নিয়োগের গতি কম থাকায় সমস্যা বাড়ছে। ফলে অনেক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের মধ্যে একজনকে চলতি দায়িত্বে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। তাদের অনেকে নিয়মিত মিটিং, প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে থাকায় পাঠদান ব্যাহত হয়। বদরগঞ্জের খালিশা হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আনিসুল হক বলেন, ‘এটি ওপরমহলের বিষয়। প্রধান শিক্ষক থাকলে শিক্ষার্থীদের ভালো হয়। আমি প্রধান শিক্ষক হয়ে উপজেলার বিভিন্ন মিটিংয়ে যেতে হয়। পরে এই ঘাটতি পূরণ হয় না।’ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম খান বলেন, ‘যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ধীরগতির কারণে অনেকে প্রধান শিক্ষক হতে পারছেন না। এতে তারা বেতনবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’ কিশামত বিষু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আফজাল হোসেন বলেন, ‘একটি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক হলেন প্রধান অভিভাবক। তিনি অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এতে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে যায়।’ প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু, বদলি, অবসরজনিত কারণসহ নানা কারণে প্রধান শিক্ষকের এতগুলো পদ খালি হয়েছে। আমরা জেলার সম্ভাব্য শূন্য পদের প্রধান শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, দ্রুত শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা হবে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক, সচিব ও উপদেষ্টা অবগত আছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *