টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার তীরে অবৈধ বালুঘাটগুলোর কারণে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব বালুঘাটের দ্রুত বৃদ্ধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এলাকার জনজীবন ও সরকারের প্রস্তাবিত প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
অবৈধ বালুঘাটের বিস্তার
ভূঞাপুরের নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নে ১৯টি অবৈধ বালুঘাট ছিল, যা আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর, স্থানীয় বিএনপি নেতারা এই বালুঘাটগুলোর দখল নেন এবং অতিরিক্ত ১৪টি নতুন বালুঘাট স্থাপন করেন।
বিএনপি নেতাদের কর্তৃত্ব
বর্তমানে ভূঞাপুর উপজেলায় ৩৮টি অবৈধ বালুঘাট চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ৩৩টি বালুঘাট বিএনপি নেতা মো. সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু এবং তার সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যান্য ৫টি বালুঘাট স্থানীয় বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন ও যুবদল নেতা টিপুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বালু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন যে, বালুঘাট পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা উঠানো হয়, যা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ বালু উত্তোলন চলমান রাখা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, জমাকৃত টাকা জরুরি সমস্যা সমাধানের জন্য রাখা হয়েছে, এবং এসব ব্যবসার কারণে সরকারের ইকোনোমিক জোন প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাঁধ ভাঙা ও কৃষকদের ক্ষতি
যেভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পাবে এবং বহু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে, নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং এতে তাদের জমি ও বাড়ি বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ
ভূঞাপুরের বলরামপুর, তারাই ও গারাবাড়ি এলাকার লোকজন বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতিকার পাওয়ার আশায় বিক্ষোভে অংশ নেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে এসে বালু উত্তোলন বন্ধের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
সড়ক অবরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অভিমত
অবরোধের সময় স্থানীয়রা অবৈধ বালুঘাটের খননযন্ত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী ভাঙচুর করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, যেভাবে বালু উত্তোলন চলছে, তাতে তাদের জমি ও বাড়ি বিলীন হয়ে যেতে পারে, এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধের ক্ষতি হতে পারে।
নদী রক্ষা ও সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা
স্থানীয়রা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং অবৈধ বালুঘাট বন্ধ করতে সহায়তা চেয়েছেন, যাতে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ সুরক্ষিত থাকে এবং সরকারের প্রস্তাবিত ইকোনোমিক জোন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে।