রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
এক সমযয়ের খরস্রোতা যমুনা নদী এখন আর সে অবস্থায় নেই। শুকিযয়ে পরিণত হযয়েছে খালে। কোথাও কোথাও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে। যমুনার অভ্যন্তরীণ অনেক রুটেই খেয়াপারের জন্য এখন আর নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। যতদূর চোখ যায় শুধুই বালুচর। নদীর গতিপথে কচ্ছপের পিঠের মতো হাজারো চর, ডুবোচরে পরিণত হয়েছে যমুনা। যমুনা সেতুর পাশে রেলসেতু তৈরিতে নদী শাসনের ফলে এখন উভয় সেতুর পার্শ্বে বিশাল আকার চর জেগে উঠেছে। যতদূর চোখে দেখা যায়, শুধুই বালুচর। এটা কি পূর্বের সেই উত্তাল ঢেওয়ের যমুনা নদী, দেখে সেটা মনে হয় না। এখন সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একসময় যে নদীর প্রশস্ততা ছিল অনেক। যমুনা ভরা যৌবনের তর্জন গর্জনে মানুষের বুকে কাঁপন সৃষ্টি করত। নদীপাড়ের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিত। সেই যমুনা শুষ্ক মৌসুমে ক্রমেই তার যৌবন হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে চরাঞ্চলের গরু ও মহিষের বাথান এলাকাগুলোর শ্রমিক ও গবাদি পশুর জীবনে দুঃখের সীমা নেই। মাঠঘাট জমিজিরাত ফেটে চৌচির। ইতিমধ্যেই বয়ে চলেছে গরম হাওয়া। ফলে আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনিসংকেত লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজারসমূহে ব্যবসায়ীরা নৌপথে বাদাম, সবজি, পাট, আলু, গম, সরিষা, বেগুন, কালাইসহ নানাবিদ পণ্য সরবরাহ করত। শুধু কৃষিপণ্যই নয়, হাট-বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া, মহিষসহ নানাবিধ পশু-পাখি। ঐ সময় যমুনাসহ শাখা নদীগুলো ছিল প্রমত্তা। এখন সেগুলো শুকিয়ে গেছে। যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নদীবক্ষে যত্রতত্র জেগে উঠেছে চর ও ডুবোচর। ফলে নদীর প্রায় প্রতিটি রুটেই নৌ-চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মেঘাই ঘাট থেকে প্রতিদিন নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ী, চরগিরিশ, মনসুর নগর, তারাকান্দি, সিরাজগঞ্জের রূপসার চর, কাউয়াখোলা চর, মেছড়া চর, এনায়েতপুর থেকে চৌহালিও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন চরে ইঞ্জিনচালিত নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নদীতে চর জেগে ওঠায় অনেক দূর দিয়ে ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে মাঝিদের। এতে তেলখরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছে। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এসব রুটে অন্য কোনো যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন। নদীর পানি কমে নৌঘাট দূরে সরে যাওয়ায় তপ্ত বালুচর ভেঙে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনসহ শিশু ও নারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নৌ রুটে বন্ধ থাকায় মাঝিরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন, তেমনি মৎস্যজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। যমুনা নদীর পানি হ্রাস পেলে তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে ১২ কিলোমিটারে পৌঁছে। এতে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবেক কাজীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত আলী মুন্সি ও নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল কবির চরম ভোগান্তির কথা শিকার করেন। এদিকে নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, চরগিরিশ ও খাসরাজবাড়ী অনেক নদীঘাটে খেয়ার পরিবর্তে ঘোড়ার গাড়ি ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে তাই অভিজ্ঞ মহল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এছাড়া খরস্রোতা যমুনায় পানি না থাকায় চরবাসী কাজ করে বাড়ি ফিরতে পারছে না। অনেক সময় শহরে আত্মীয় বা হোটেলে রাত্রি যাপন করতে হয়।