মো. আফজল হোসেইন, শ্রীমঙ্গল
দীর্ঘ খরতাপের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি নেমেছে শ্রীমঙ্গলে। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জনজীবনে ফিরে এসেছে সজীবতা। টানা তাপদাহে হাঁসফাঁস করা প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেল এই বৃষ্টিতে। তবে এর আগে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও তা ছিল নিতান্তই সামান্য, যা কেবল ধুলোবালি ভিজিয়ে ক্ষণিকের জন্য অস্বস্তি কিছুটা কমিয়েছিল মাত্র। গতকাল বুধবার দিনের শুরুতে তেমন কোনো আভাস না থাকলেও সকাল থেকেই শ্রীমঙ্গলের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। এরপর দুপুর ঠিক ১২টা নাগাদ শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি, যা একইসাথে নিয়ে আসে স্বস্তির পরশ। বৃষ্টির শীতল ছোঁয়ায় দীর্ঘদিনের ভ্যাপসা গরম থেকে মুক্তি পায় স্থানীয় মানুষ। এই বৃষ্টি শ্রীমঙ্গলের কৃষকদের জন্য এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। সিন্দুর খান ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাসিত, যিনি মূলত ধান চাষ করতেন, কিন্তু সাম্প্রতিক অনাবৃষ্টির কারণে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। তিনি জানান, বৃষ্টির অভাবে তার জমিতে চাষাবাদে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে, এই বৃষ্টি তার আশেপাশের ধান চাষ করা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে বলে তিনি মনে করেন। আব্দুল বাসিত বলেন, এই বৃষ্টি ধান চাষিদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। দীর্ঘদিন খরা থাকার পরে এই বৃষ্টি তাদের জমিতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করবে এবং ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদিও তার নিজের জমিতে অনাবৃষ্টির কারণে সমস্যা রয়ে গেছে, তবে এই বৃষ্টি বৃহত্তর কৃষি অঞ্চলের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। শ্রীমঙ্গলের চা বাগান কর্তৃপক্ষও এই বৃষ্টিতে খুশি। তারা জানিয়েছেন, এই বৃষ্টি চা গাছের জন্য বেশ উপকৃত। এতদিন ধরে কৃত্রিম সেচ দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখার যে চেষ্টা চলছিল, এখন প্রকৃতি নিজেই সেই দায়িত্ব নিল। এই বৃষ্টি চা গাছের নতুন কুঁড়ি গজাতে এবং ফলন বাড়াতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে, শহরের সাধারণ মানুষও এই বৃষ্টিতে স্বস্তি অনুভব করছেন। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন কিছুটা হলেও প্রশান্তি লাভ করেছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দৈনন্দিন কাজকর্মও কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেকে। প্যাডেল চালিত রিকশাচালক মো. ইদন মিয়া এই বৃষ্টিতে তার স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, “মৌসুমের শুরুতে এই প্রথম এমন ভারী বৃষ্টি নামলো। শরীরে শীতলতা অনুভব হচ্ছে, মনটাও এখন বেশ প্রফুল্ল লাগছে। ভ্যাপসা গরমে রিকশা চালাতে আমাদের খুব কষ্ট হতো, হাঁপিয়ে যেতাম। আবহাওয়া একটু শীতল থাকলে আমরাও কিছুটা বাড়তি আয় করতে পারি।” এবিষয়ে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, আজ ১১ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী আরও দুই একদিন এই বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে, মৌসুমের প্রথম এই প্রকৃত বৃষ্টি কারণ এর আগে যা নেমেছিল তা ছিল কেবল নামমাত্র, ধূসর ধুলো ভেজানোর মতো শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি ও জনজীবনে এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে প্রকৃতি যেন আবার তার সবুজ রূপে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃষকের মুখে হাসি এবং সাধারণ মানুষের মনে শান্তি এই বৃষ্টি যেন এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আগমন করলো শ্রীমঙ্গলে।