আমিনুল হক শাহীন ও সওকত আলী খান, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩৮তম দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভা গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর শহীদ মো. ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। বন্দর দিবসে মত বিনিয়ম সভায় চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের এভারেজ ওয়াটিং টাইম উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। বতর্মানে কন্টেইনার জাহাজ বহিঃনোঙ্গরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-এ্যারাইভ্যাল জেটিতে ভিড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমান কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় তা মূলত বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীন চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিফলন। চট্টগ্রাম বন্দরের এই ধারাবাহিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রীক অর্থনীতির চিত্র পরিস্ফুটিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২০২৩-২০২৪ এর একই সময়ের তুলনায় ৫.০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লক্ষ ১৩ হাজার ১শত ৬১ মেট্রিক টন যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৯৬ শতাংশ বেশি। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে জাহাজ ঈ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০৫৮টি। এতে বুঝা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শত প্রতিকূলতার মাঝেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সহায়ক অন্যান্য সংস্থা/এজেন্সী যেমন শুল্ক বিভাগ, ব্যাংক, শিপিং এজেন্টগণ আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ২৪৭ কার্যক্রম সম্পাদন করছে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম কাষ্টমস এর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কোন ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতা নাই। তথাপিও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য ১২টি ২০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছে। এলসি খোলা হয়েছে ০২টি হেভী ট্রাক্টর, ০২টি লো বেড ট্রেইলার। এলসি খোলার প্রক্রিয়াধীন ০১টি ম্যাটেরিয়াল/ মাল্টি হ্যান্ডলার। চবক পোর্ট লিমিট এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে কাজের জন্য ১২টি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন জাহাজ ক্রয় করা হবে। উক্ত ইক্যুইপমেন্টসমূহ সংগ্রহের ফলে বন্দরের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার খ্যাত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ-১ (২টি জেটি নির্মাণ) এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্টান পেন্টাওশান কন্সট্রাকশান কোম্পানী ও টোয়া কর্পোরেশন এর সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর গত ২২-০৪-২০২৫ তারিখে সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে বলে আশা করা যায়। আপনারা জানেন যে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে রেজেওনাল ট্রান্সশিফমেন্ট হাব হিসাবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে
বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসাবে জাইকা’র সহযোগীতায় বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটির ২য় সংশোধিত ডিপিপি গত ০৭/১০/২০২৪ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় সিভিল, ড্রেজিং, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি এবং জাহাজসমূহ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয় চুক্তি ইতোমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে এবং সিভিল ও ড্রেজিং কার্যক্রমের চুক্তি অতিশিঘ্রই সম্পাদিত হবে এবং নির্মাণ কার্যক্রম অতিদ্রুত শুরু করা হবে। এ লক্ষ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে ৬১২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার বরাবরে দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি টঅঊ, জাপান এবং সিঙ্গাপুরের দূতাবাসসমূহের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদলের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক এবং সফরে প্রতিনিধিদল মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকায় বিভিন্ন মেরিটাইম ইনফ্রাক্ট্রাকচার সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের তথ্যাদি সংগ্রহ করেন এবং মেরিটাইম সিকিউরিটি, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।