শেখ ইলিয়াস মিথুন, মাগুরা
মাগুরায় জেলায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু জেলায় অধিকাংশ কৃষকরা বোরো ধান নিয়ে শঙ্কিত হয়ে হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি ও ধানের দাম কম থাকায় বিপাকে পড়ছেন জেলার কৃষকরা। সরজমিন জেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পারছেন। তারা বলছেন মাঝে মাঝে হালকা ও ভারী বর্ষণের ফলে ধানের কিছুটা ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। অনেক স্থানের বৃষ্টির কারণে ধান রোদে শুকাতে পারছেন না কৃষক। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধান ঘরে তুলতে পারছেন অনেক কৃষক। বাকী ধান কেটে অনেক কৃষক তার জমিতে শুকাতে ফেলে রেখেছেন। গত কয়েকদিন জেলায় বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে ভারী বর্ষণের কারণে মাঠের ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নিদিষ্ট সময়ে এ ধান ঘরে তুলতে না পারলে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠবে না। কারণ এবার ধানের ফলন ভালো কিন্তু দাম কম থাকাতে অনেকে পড়ছেন বিপাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় মোট বোরো ধান আবাদ হয়েছে ৩৯ হাজার ৫শত ৩০ হেক্টর। তার মধ্যে সদরে ১৭ হাজার ৩৬৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর, শালিখায় ১৩ হাজার ৫৭৫ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। সদরের নালিয়ারডাঙ্গি গ্রামের চাষী আকিদুল ইসলাম জানান, আমি এবার ৭০ শতক জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ধানের ফলন এবার খুবই ভালো কিন্তু ধান কেটে মাঠে শুকাতে রেখেছি। গত কয়েকদিন হালকা থেকে ভারী বর্ষনে ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। দু’একদিন রোদ হলে ধানের তেমন কোন ক্ষতি হবে না ভাবছি। আমার অর্ধেক ধান ঘরে উঠেছে। বাকী ধান কেটে ঘরে নিয়ে খুবই শঙিÍ রয়েছে। কারণ আবহাওয়া এ ভালো এ খাবাপ। মাঠে এখন পুরোদমে চলছে ধান কাটা। অনেক ধান কেটে আমরা মাঠে শুকাতে রেখেছি। যদি ভারী বর্ষণ হয় তাহলে ধানের অনেক ক্ষতি হবে। একই গ্রামের অন্য চাষী সাজ্জাদ বিশ্বাস জানান, আমি ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধান এখন পুরোপুরি পেকেছে। তাই শ্রমিক নিয়ে মাঠে ধান কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ধান কেটে দু’দিন মাঠে রাখতে হয় রোদে শুকানোর জন্য। এখন আবহাওয়ার অবস্থা তেমন ভালো না। মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে হালকা আবার কোন সময় ভারী। তাই শঙ্কিত আছি সময় মত ধান কেটে তা মাড়াই করতে পারবো কিনা। সদরের নরসিংহাটি গ্রামের চাষী জামিল বলেন, আমার ৫ বিঘা ধানের মধ্যে ২ বিঘার ধান ঘরে তুলেছি। বাকী ধান কেটে ঘরে তুলতে শঙ্কিত অবস্থার মধ্যে আছি। এখন ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছি না। একজন শ্রমিক দিন প্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা নিচ্ছে। তাই সব মিলে বিপাকে আছি। সদরের মঘী গ্রামের চাষী মিলন বলেন, এবার ধানের ফলন ভালো কিন্তু ধানের দাম খুবই কম। এখন প্রতি মণ ধান ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কম থাকার কারণে আমরা বিপাকে আছি। আবার পুরোপুরি ধান কেটে মাঠে রেখে বৃষ্টি হচ্ছে বিধায় শঙ্কিত। মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: তাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে এবার জেলায় বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদিত হয়েছে। তেমন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকাতে জেলার কৃষকরা সঠিক সময়ে ধান কাটছেন। তিনি আরো জানান, জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ ধান কাটা শেষ। তবে শেষ সময়ে জেলায় বিভিন্ন স্থানে মাঝে মাঝে কিছুটা হালকা থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। তবে এ বর্ষণে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও ফলন ভালো হওয়ায় এ ক্ষতি পুশিয়ে যাবে।