নিজস্ব প্রতিবেদক:ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী এক দোকানের নাম‘হোটেল মেহেরবান’। এই দোকানের বিশেষত্ব ‘টক-মিষ্টি’ জিলাপি। জিলাপির স্বাদ নিতে নগরবাসী ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে আসেন লোকজন। রমজান এলে বাড়ে ব্যস্ততা। প্রতিদিন বিক্রি হয় লাখ টাকার জিলাপি। তবে কয়েকদিন ধরে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। বিক্রি নেমে এসেছে ৩০ হাজারে।শহরের জিলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত হোটেল মেহেরবান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জাকির হোসেন। সাধারণত দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের ঢল নামলেও ইদানীং চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বিকেলে এক দুইজন করে আসলেও পরিমাণে নিচ্ছেন কম। ঢিলেঢালাভাবে বিকিকিনি চলছে। কিছু কর্মচারীকে অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
এসময় কথা হয় দোকান মালিক জাকির হোসেনের ছেলে আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রমজানের প্রথমদিন থেকে প্রতিদিন অন্তত এক লাখ টাকার জিলাপি বিক্রি হয়েছে। এভাবেই একচেটিয়া বিক্রি হয়েছে ২০ রমজান পর্যন্ত। তবে এরপর থেকেই হঠাৎ ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আশানুরূপ বিক্রিও হচ্ছে না।
ক্রেতা কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ঈদের এক সপ্তাহ আগে জিলাপি বিক্রি কিছুটা কমে যায়। কারণ তখন অনেকে ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া অনেকে জিলাপি কিংবা ইফতার সামগ্রী ছাড়াই ইফতার সেরে ফেলেন। তবে এবার আগে থেকেই ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমেছে। এখন ক্রেতারা ভিড় করছেন না। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এত কম বিক্রি হওয়ার কারণে বেশি লাভ করতে পারছি না। কারণ এগুলো বানাতে বিভিন্ন উপকরণ কিনতে হয়। এছাড়া দোকানে ১৫ জন কর্মচারী রয়েছে। বিক্রি কমলেও মানবিক কারণে তাদের ছাঁটাই করছি না। তাদেরকে বেতন দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে নিজের পরিশ্রমতো আছেই। মনে হচ্ছে, ঈদের মার্কেট বেশি জমজমাট হওয়ার কারণে জিলাপির ক্রেতা কমেছে।
নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মইনুল হক। তিনি জিলাপি কিনতে এসে বলেন, ইফতারে জিলাপি না থাকলে ভালো লাগে না। পরিপূর্ণ স্বাদও পাওয়া যায় না। আমার বাসা মেহেরবান হোটেলের পাশাপাশি হওয়ায় প্রতিদিন গরম গরম ঐতিহ্যের এই জিলাপি কিনে নিয়ে ইফতার করি।
তিনি বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে অনেকে খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছেন। রমজান শুরুর পর থেকে ক্রেতারা জিলাপির ভিন্ন স্বাদ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানে এলেও এখন আসছেন না। সে কারণেই ক্রেতা কমেছে। তবে এই জিলাপির কদর থাকায়, কখনোই বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হবে না। স্বাদ ঠিক রাখতে পারলে সারাবছরই ভালো বিকিকিনি হবে।
দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা হয় জিল্লুর রহমান নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বেসরকারি একটি চাকরি করে পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়। ঈদের কেনাকাটায় খরচ জোগাতে চিন্তায় আছি। কয়েকদিন এই দোকান থেকে জিলাপি কিনে ইফতারের সময় খেয়েছি। এখন আর কিনি না। বাসার পাশেই কম দামে জিলাপিসহ ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয়। সেগুলোই কিনে খাচ্ছি।
জানা যায়, মচমচে আর কুড়কুড়ে শব্দে ভিন্ন স্বাদের ছোট্ট আকারের প্যাঁচানো এই জিলাপি ১৯৯৩ সালে প্রথম বিক্রি শুরু হয়। ক্রেতারা স্বাদে ভিন্নতা পাওয়ায় দোকানটি টিকে আছে প্রায় তিন যুগ ধরে।
বর্তমানে টক-মিষ্টি জিলাপি ২২০, অমৃতি টক-মিষ্টি জিলাপি ২৬০ ও ঘিয়ে ভাজা স্পেশাল টক-মিষ্টি জিলাপি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য ইফতার সামগ্রী।এ বিষয়ে হোটেল মেহেরবানের মালিক জাকির হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই ক্রেতা কমে গেছে। তাতে মনে কষ্ট নেই। যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তাতেই সন্তুষ্ট। আমি জিলাপির স্বাদ আর মান ঠিক রাখতে চেষ্টা করছি। স্বাদ ঠিক থাকলে সারাবছর ক্রেতা আসবে। এতে যুগের পর যুগ ধরে এই দোকানসহ জিলাপির ঐতিহ্য টিকে থাকবে।