ePaper

ভারতের শুল্কে রপ্তানি-বিনিয়োগে সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের কারণে বাংলাদেশের টি-শার্টসহ তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার সুযোগ দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে শিল্পে গ্যাস সংকট দূর করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন রপ্তানিকারকরা। এছাড়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,বন্দর ব্যবস্থাপনা সহজতর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন এবং ব্যাংকিং সেক্টরের সংকট দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। রাশিয়া থেকে জ্বালানী তেল আমদানির কারণে ভারতের ওপর বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ পাল্টা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ওপর মোট ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করলো যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে বাড়তি অর্ডার আসার পাশাপাশি চীন ও ভারত থেকে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চীন। তার পরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ভারত। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অন্য সব খরচ অপরিবর্তিত থাকলেও শুধু শুল্কের কারণে চীন ও ভারতের বদলে বাংলাদেশ থেকে একই পণ্য আমদানি করলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের খরচ কমবে ৩০ শতাংশের মতো। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বাইরে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কও তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এসব দেশের শুল্কহারও বাংলাদেশের প্রায় সমান। তবে দেশগুলোর রপ্তানি বাড়ানোর সক্ষমতা তেমন নেই বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকবে বলে আশা করছেন তারা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদুল হাসান বাবু টিবিএসকে বলেন, ‘ভারত ও চীনের ওপর বিদ্যমান বাড়তি শুল্ক বহাল থাকলে এই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি অর্ডার ও বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ টেক্সটাইল খাত সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করতে পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হলে এখনই টেক্সটাইল খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ও সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করতে হবে। কারণ, বিদেশ থেকে ফেব্রিক, সুতা আমদানি করে রপ্তানি খুব বেশি বাড়ানো যাবে না।’ বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, ‘ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে বাংলাদেশের টি-শার্টসহ অন্যান্য পোশাক রপ্তানিও বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘বাড়তি শুল্কের কারণে চীন ও ভারতের পোশাক রপ্তানি কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহের যে গ্যাপ তৈরি হবে, তা সরবরাহ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম ছাড়া আর কারো নেই। ফলে আমাদের সামনে রপ্তানি বাড়ানোর বড় ধরনের সুযোগ আছে। এই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারবো, তা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’ বিকেএমই সভাপতি আরও বলেন, ‘রপ্তানি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে আমাদের গ্যাস সংকট দূর করতে হবে। বন্দরে কাজের গতি বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকখাতে অর্থায়নের যে সমস্যা চলছে, সেটিও দূর করতে হবে।’ বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-এর (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ টিবিএসকে বলেন, ‘ভারত টি-শার্ট ও ফ্যান্সি এবং হাইলি ডিজাইনড লেডিস আইটেম (নারীদের নান্দনিক ও জাঁকজমকপূর্ণ ফ্যাশন সামগ্রী) এক্সপোর্ট করে। তারা মূলত মধ্যম ও উচ্চ দামের পোশাক রপ্তানি করে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের রপ্তানি করা টি-শার্টে এম্বুসড ডিজাইন ও বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট পুঁতি থাকে। আর ভারত যে ধরনের লেডিস আইটেম তৈরি করে, বাংলাদেশ সেগুলো তৈরি করতে পারে না। আমরা কমদামের অধিক পরিমাণ পোশাক রপ্তানি ও রপ্তানি করি। আর ভারত অল্প পরিমাণে উচ্চ ও মধ্যম দামের পোশাক রপ্তানি করে।’ বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ভারতের ওপর বাড়তি শুল্কের কারণে আমাদের টি-শার্ট রপ্তানি বাড়বে। একইসঙ্গে ভারত ও চীন যে ধরনের পোশাক রপ্তানি করে, যেহেতু উচ্চ শুল্কের কারণে বায়াররা ওইসব দেশ থেকে আইটেমগুলো আমদানি করতে অনাগ্রহ দেখাবে, তাই দেশ দু’টি থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’ এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন এই রপ্তানিকারক। তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সরকার কোন ধরনের সাপোর্ট দেবে, ট্যারিফ ও ট্যাক্স সিস্টেম কি হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কতটা কমাতে পারবে, তার ওপর বিনিয়োগ প্রাপ্তি নির্ভর করবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করছে জানিয়ে পারভেজ বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ ব্রিকস দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একজোট হতে পারে।’ সেক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে সরকারের এখন থেকে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিসিআই সভাপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *