রিজিয়া সরকার, গঙ্গাচড়া
রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সংযোগ তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা ৯০০ মিটার বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে গিয়ে স্থানটিতে প্রায় ৭০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর যোগাযোগ সড়কসহ তিস্তা পাড়ের হাজারো পরিবার। সেতু রক্ষা বাঁধটি গত দুই বারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ড মর্মে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। তাই নদিতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে স্থানটিতে প্রায় ৭০ ফিট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তিন গ্রামের ১ হাজার ২’শ পরিবারসহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে তিস্তা সেতু। গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি উজানের ঢলে নেমে আসা তিস্তায় পানি কমে গেলেও তীব্র স্রোত সরাসরি এসে আঘাত হানছে বাঁধের গায়ে। এতে নিচের অংশের মাটি সরে গিয়ে ধসে পরছে ব্লকগুলো। প্রতিনিয়ত একটু একটু করে নিচে নেমে যাচ্ছে বাকি পিচিং করা ব্লকগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার যোগাযোগ সহজ করতে ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা সেতুটি। যা রংপুর অঞ্চলের দ্বিতীয় তিস্তা সেতু হিসেবে পরিচিত। লক্ষীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, এর আগে দুই বারের বন্যায় যখন বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার যেভাবে পানি এসে বাঁধটিতে সরাসরি আঘাত হানছে এতে করে উজানের ঢল আর একটু বৃদ্ধি পেলে এই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে পানি এসে সরাসরি আঘাত হানবে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে। এতে সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় আতংকিত জনগন। আর যদি সড়কটি ভেঙে যায় তাহলে লালমনিরহাট জেলার সাথে রংপুর শহরের যোগাযোগ সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং বাঁধের পাশে থাকা শংকরদহসহ তিনটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ২’শ পরিবার ভাঙন হুমকিতে পড়বে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেতু ও সড়কটি রক্ষার জন্য দ্রুত বাঁধ সংস্কারের কাজ করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, মহিপুরে তিস্তা সেতুটির পশ্চিম অংশের বাঁধটি তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর কমতে শুরু করলে ভাঙন শুরু হয় যা আতংক সৃষ্টি করেছে। ভাঙনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকৌশলী মজিদুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শন করেছেন। এখন কি অবস্হায় আছে তা স্যারের সাথে কথা বলে জেনে নিয়ে এখনকার পরিস্থিতি আমি জানিয়ে দিব।
উল্লেখ্য, গঙ্গাচড়ার মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম উপজেলা সহ বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমিয়ে উক্ত এলাকার জনসাধারণের রংপুর বিভাগীয় শহরের সাথে যোগাযোগের সুবিধা ও ব্যবসা বানিজ্যের প্রসারতা বৃদ্ধির লক্ষে তিস্তা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এই সেতুর উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের মহিপুর এলাকাকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। জানা যায় সেতুটি ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ। সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার, ১৭টি স্প্যান, ৮৫টি গার্ডার।
