বেলুচিস্তানে ব্যাংক লুট, সরকারি কর্মকর্তাকে হত্যা করল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য বেলুচিস্তানের হিদায়াতুল্লাহ বুলেদি নামের এক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনের বাড়িতে ঢুকে তাকে হত্যা করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। শুক্রবার রাজ্যের সুরাব শহরে ঘটেছে এই ঘটনা।

সুরাব জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন এ তথ্য। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “শুক্রবার সুরাব শহরের একটি ব্যাংক লুট করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে এবং সুরাবের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিদায়াতুল্লাহ বুলেদির বাড়িতে ঢুকে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই হামলা ছিল রাষ্ট্রের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করার একটি ঘৃণ্য অপচেষ্টা।”

বিবৃতিতে হামলার জন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীকে দায়ী করেননি রিন্দ; তবে বলেছেন হামলাকারীরা ভারতের মদতপুষ্ট। পাশপাশি তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের করার জন্য ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে সেনা-পুলিশ যৌথ বাহিনী এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

অভিযানের হালনাগাদ তথ্য জানতে সুরাব পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ডন, তবে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

প্রসঙ্গত, ভৌগলিক আয়তনের বিবেচনায় পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ ও তিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বেলুচিস্তান বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনবিরল। দেশটির খনিজ ও অন্যান্য সম্পদের ভাণ্ডারও বেশ সমৃদ্ধ। তবে এই প্রদেশে বসবাসকারী জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাকিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে চাইছে ১৯৪৮ সাল থেকে। তারা বেলুচিস্তান নামে একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পক্ষপাতি।

বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতা বাদ কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু।  ১৯৪৭ সালের আগস্টে  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে। ব্রিটিশ আমলে এই প্রদেশে মোট ৪টি করদ রাজ্য বা প্রিন্সলি স্টেট ছিল— মাকরা, লাস বেলা, খারান এবং কালাত। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মাকরা, লাস বেলা এবং খারান পাকিস্তান ইউনিয়নে যোগ দিলেও খালাতের তৎকালীন রাজা আহমেদ ইয়ার খান বালোচ তখন পাকিস্তানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরের বছর ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, কিন্তু এবার বেঁকে বসেন আহমেদ ইয়ার খান বালোচের ভাই প্রিন্স আগা আবদুল করিম খান বালোচ। পাকিস্তানে যোগদানের পরিবর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই থেকে বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু।

এর পর ৭ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বেলুচিস্তানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের কোনো উন্নতি তো হয়ইনি, বরং উত্তরত্তোর অবনতি হয়েছে। রাজ্যটির স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মির সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সংঘাত এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

কিন্তু ইে সংঘাতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হলেও বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সুদূরপরাহত। স্বাধীন বেলুচিস্তানের জন্য প্রতিবেশী ইরান ও আফগানিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন। কারণ বেলুচিস্তানের কিছু অংশ ইরান ও আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে।

কিন্তু ইরান ও আফগানিস্তানের পক্ষে ওই সমর্থন দেওয়া কখনও সম্ভব নয়। তার কারণ, পাকিস্তানের বেলুচরা স্বাধীনতা অর্জন করলে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচরা স্বাধীন বেলুচিস্তানে যোগ দিতে চাইবে। তাছাড়া বর্তমানে বেলুচ আন্দোলনের নেতৃত্ব বহু ধারায় বিভক্ত, নেতাদের মধ্যে মতবিরোধও তীব্র।

এদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রচার করছে যে বালোচ লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ ভারতীয় মদতপুষ্ট। গত মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিতিশীল করতে বিএলএকে নিয়মিত অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *