ePaper

বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে: ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সংকট

বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগের পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ।
বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো তাঁদের জন্য আরও কঠিন করে তুলেছে।

বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকেই দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতার কারণে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা, এবং আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা বিনিয়োগকারীদের জন্য সংকটের সময় নিয়ে এসেছে। অস্থির পরিস্থিতি আরও গভীর হয়েছে আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, এবং গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও দেশের অর্থনীতি এখনো বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তার প্রভাব: বিনিয়োগকারীদের কঠিন পরিস্থিতি

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য এক বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত যখন ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে। ডিসেম্বরে ডলারের দাম অস্থিরতা তৈরি করেছে, যা দেশের বৈদেশিক লেনদেন এবং বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে: বিনিয়োগের সংকেত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার ২৬ শতাংশ কমেছে। একদিকে, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এক বড় সংকেত। এর মানে হল, নতুন বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ কমেছে।

ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি: ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধি করার পর, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর ফলে, বেসরকারি খাতে ঋণগ্রহণ কমে গেছে। গত অক্টোবরে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল, যা গত ৪১ মাসে সর্বনিম্ন। এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ উচ্চ সুদের হার বিনিয়োগের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

বেকারত্বের হার বৃদ্ধি: চাকরির বাজারের অস্থিরতা

বেকার জনগণের সংখ্যা দেশের অর্থনীতির এক বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে শ্রমশক্তির ২৬ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বেকার ছিলেন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৪০ হাজার বেশি। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্নাতকদের জন্য চাকরি সুযোগ কমিয়ে ফেলেছে।

দুর্নীতি ও অর্থায়ন সমস্যা: ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন দুর্নীতি। সিপিডির একটি জরিপে প্রকাশিত হয়েছে যে, ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৭ শতাংশই দুর্নীতি ও অদক্ষ আমলাতন্ত্রকে তাদের ব্যবসায় বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর পাশাপাশি, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ করহারও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া: শ্রমিকদের জন্য অনিশ্চয়তা

রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং ব্যবসায়িক পরিস্থিতির অবনতির ফলে, বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কারখানা ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায়, এবং এতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। এছাড়াও, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আটটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।

বৈদেশিক বিনিয়োগের ভবিষ্যত: অর্থনৈতিক উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এই বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেছেন, “বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচনের আয়োজন জরুরি।” দ্রুত নির্বাচন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার প্রতি আগ্রহী হবেন।

বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারে সরকারের পদক্ষেপ: দ্রুত নির্বাচন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার

বিনিয়োগ পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এফডিআই (বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ) বৃদ্ধি করতে হলে, রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। এছাড়া, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করার জন্য দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত, যাতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হন।

Share Now:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *