মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলার রাউজান উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিজয় মেলা আয়োজন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে মেলা করার প্রয়োজন নেই। রাউজান কলেজ মাঠে মাসব্যাপী বিজয় মেলা ঘিরে বিএনপি’র দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, চার্জশীট হয়েছে। বিজয় মেলা নিয়ে কোন ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনো কামনা করিনা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুধুমাত্র একদিন ব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হবে। কোনভাবেই এক দিনের বেশী বিজয় মেলা হবে না এবং আর কোন মেলার অনুমতি দেয়া হবে না। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন শুধুমাত্র তোপধ্বনি, স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সালাম গ্রহণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক। জেলা প্রশাসক বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিক্সাকে নিবন্ধের আওতায় নিয়ে আসা, রাস্তা দখল করে হাট-বাজার স্থাপন না করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, নারী ও শিশু নির্যাতন, রেল, নৌ ও সড়ক পথে মাদক পাচার রোধ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, যানজট এবং বন্য হাতির উপদ্রব থেকে জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় সিষ্টেমে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে উভয় পাশে যানজট লেগে থাকে। পাশাপাশি নির্দেশনা না মেনে টোল প্লাজা লাগোয়া ফুটপাত দিয়ে অবৈধ ব্যাটারী রিক্সা ও ভ্যানগাড়ী পারাপারের কারণে সেতুতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ আন্তরিক হলেও পরিবহণ চালকদের অসহযোগিতার কারণে তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। টোল প্লাজা লাগোয়া উভয় পাশের ফুটপাতের মাঝখানে দু’টি পিলার স্থাপন করে দিলে অবৈধ ব্যাটারী রিক্সা ও ভ্যানগাড়ী পারাপার হতে পারবেনা। এ জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান বলেন, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার খামার থেকে বেশ কিছু গরু চুরি হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে চাঁদপুর থেকে চোরাইকৃত ১৪টি গরু উদ্ধারসহ চোর চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে তাদেরকে বিভিন্ন থানা এলাকার গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কোন জিনিষ চুরি-ডাকাতির পর মালামাল উদ্ধার ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে অপরাধীদের গ্রেফতার করা পুলিশের দায়িত্ব। থানা পুলিশ আইনগত সাপোর্ট না দিলে, কারও সাথে দুর্ব্যবহার কিংবা অসহযোগিতা করলে সরাসরি এসপিকে জানাবেন। বিজয় মেলা প্রসঙ্গে এসপি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেলা হবে একদিন। এর ব্যত্যয় ঘটবেনা। মেলায় চাঁদাবাজি, মাদক, ইভটিজিং, জুয়া খেলা ও কোন ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ করতে দেয়া হবে না। মেলাকে ঘিরে কোন ধরণের আইন-শৃঙ্খলার দেখা দিলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারীর করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সভায় ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে মারা গেছে ১৬ জন, তন্মধ্যে ১৩ জন চট্টগ্রাম জেলার ও বাকী ৩ জন অন্যান্য জেলা থেকে এসে চমেক হাসপাতালে চিকিৎিসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। গত জানুয়ারি থেকে চলতি ৯ ডিসেম্বও পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৩২ জন, মারা গেছে চট্টগ্রাম জেলার ২৩ জনসহ মোট ৪২ জন, তন্মধ্যে পুরুষ ১৫ জন, নারী ২৩ জন ও শিশু ৪ জন। আক্রান্তরা বর্তমানে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খান, ডিজি এফআই’র উপ-পরিচালক কাজী রাজীব রুবায়েত, এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক শাহ সুফী নুর নবী, মেট্টো এনএসআই’র উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ প্রমুখ।