ePaper

বাড়ির আঙ্গিনায় সজনে গাছ লাগিয়ে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন গৃহস্থরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সবজি হিসেবে সজনে  জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। তবে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তা কেবল স্বাদের জন্যই নয়। এর নানা ঔষধি গুণের জন্যও। চিকিৎসকরাও এখন নানা রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য সজনে পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কাজেই কারো বাড়ির বাগানে বিনাব্যয়ে ও বিনাশ্রমে যদি সজনে গাছে হাজার হাজার টাকার সজনে উৎপাদিত হয় তাতে উল্লসিত হবার কথা বৈকি। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে সজনে  অর্থকরী সবজিও হয়ে উঠতে পারে।মেহেরপুর জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে এখন সজনে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাঁটা। ডাঁটার ভারে নুয়ে পড়ছে ডাল। বিনাব্যয়ে উৎপাদিত এসব সজনে গাছের ডাঁটা বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করছেন এলাকাবাসী।  শীতের শেষে গরমে মেহেরপুরে এখন মৌসুমী ও সুস্বাদু সব্জী সজনে  খাওয়ার ধুম । জেলার প্রতিটি বাড়িতেই এখন মাছ, চালকুমড়ার বড়ি, আলুর সাথে সজনে ডাঁটা রান্না হচ্ছে। বাজারের থলেতে সজনে ডাঁটা সবার হাতে হাতে। কেউ আবার নিয়ে যাচ্ছেন আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে।  বহুগুণে গুণান্বিত সজনে ডাঁটার গাছ এখন মেহেরপুর  জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়। বাজার দাম এবং চাহিদার কারণে অনেকে এখন সজনে  চাষ করছেন। সব্জী হিসাবে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের  চাষ অনেক লাভজনক। বাড়ির আনাচে-কানাচে বা পতিত জমিতে এই গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়।

ফুল থেকে লকলকে কচি ডাঁটা যখন বাজারে ওঠে ৬শ থেকে ৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে  যখন পরিপুর্ণ বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে। এবার প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসছে প্রচুর। সজনে উৎপাদনে চাষিদের কোন খরচ হয়না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজনে ডাঁটা উৎপাদিত হয় তার সবটুকুই চাষির লাভ।তবে জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজনের গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নাই।মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সজনে চাষি মুকুল বিশ্বাস জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাঠে কোন জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চারপাশে ২৫টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এই গাছগুলি লাগাতে কোন খরচ হয়নি তার। তিনি এই মৌসুমে ৫০-৬০ হাজার টাকার সজনে ডাঁটা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। দর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের গৃহস্থ মুকুল বিশ্বাস বলেন, এখন সজনে গাছে থোকায় থোকায় ডাঁটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাঁটায় পরিপূর্ণ। নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছিলাম। তবে যে পরিমাণে সজনে ডাঁটা ধরেছে তা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ১৫-২০ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরও জানান, সজনে চাষে কোন খরচ হয়না। গাছের ডাল লাগালেই হয়। ডাল লাগানোর পর কয়েকদিন গোড়ায় পানি দিলেই মাটিতে গাছের শেকড় গজায়। তবে সজনের প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। ঝড়ে যদি ডাল ভেঙ্গে যায় এমনকি গাছ উপড়ে পড়ে তাহলেই এর ক্ষতি হয়। সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বাসসকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজনের সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় সজনে গাছ আছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজনে ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, দেশে সজনে সচারাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। মেহেরপুরে আগে বারমাসী জাতের সজনের আবাদ কম হলেও এখন তা বেড়েছে। সজনে গাছের জন্য কোনো চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। তাই কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের মাঝে সজনের চারা বিতরণ করে সজনে চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *