নিজস্ব প্রতিবেদক
মালয়েশিয়ায় তুলনায় আমদানির বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মালয়েশিয়ায় ২৯৩ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে আমদানি করেছে দুই হাজার ৬০৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। উচ্চ শুল্কই রপ্তানি না বাড়ার প্রধান অন্তরায়। মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে দেশটির পাশাপাশি খুলবে আসিয়ানে রপ্তানির দুয়ারও। ভারত ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ফলে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক সুবিধা পেলেও, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখনো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্যসহ মূল খাতগুলো মারাত্মক প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। এতে সম্ভাবনা থাকলেও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শুধু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি বাড়বেই না বরং আসিয়ান বাজারে নতুন রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে, যেহেতু মালয়েশিয়াকে এ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে ধরা হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাধা কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি না থাকা। এ কারণে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। আমরা যদি বিনা শুল্কে প্রাণের পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাই, তাহলে সেখানে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মালয়েশিয়ার খাদ্যপণ্যের বাজার ধরতে পারবো। এতে দেশটিতে শুধু প্রাণের পণ্যের রপ্তানিই পাঁচগুণ বাড়বে বলে আমরা আশা করি।’আমদানি-রপ্তানির চিত্র
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় ২৯৩ দশমিক ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, অপরদিকে দেশটি থেকে আমদানি করেছে দুই হাজার ৬০৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। এর মানে হচ্ছে, বাংলাদেশ বিপুল বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে এবং বাণিজ্য ভারসাম্য মালয়েশিয়ার অনুকূলে।ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থাকায় তারা বাজার দখল করছে। বাংলাদেশি পণ্য ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে টিকে থাকা কঠিন।- বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহকৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানির বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যার পরিমাণ ১৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট রপ্তানি আয় গত অর্থবছরে ছিল ২৯৩ মিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়া এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (ম্যাট্রেড) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া মোট ১১৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত মূল্যের ভোক্তাপণ্য আমদানি করেছে, যা তাদের মোট আমদানির ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ভোক্তাপণ্য আমদানির বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, অশুল্ক বাধা দূর এবং পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।সমান কী
মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা, মানুষের আয় ও আসিয়ানভুক্ত দেশের প্রবেশের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকলেও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। সমস্যার সমাধান ও সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা দ্রুত ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) সম্পাদনের দাবি জানিয়েছেন।
