পি. কে. বিশ্বাস
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শনিবার জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ : একটি সংগ্রামী জীবনের উপাখ্যান’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেমিনার ও আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ২৬ ব্যাটালিয়নের নায়েক মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের ভাগ্নি মোছা. ফাতেমা বেগম। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব (উপসচিব) মো. সাদেকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের কীপার আসমা ফেরদৌসি। প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করা হয় তাঁদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ অন্যতম। তিনি ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৮ মে ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদান করেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে নিয়োগ দেয়া হয় পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে দেশের উত্তাল পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে জারী হয় বিশেষ সতর্কতা। তখন তিনি ইপিআর এর ১১নং উইং চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ কালরাত পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন সারা দেশে ব্যাপক গণহত্যা চলাল, তখন ইপিআর বাঙালি সৈনিকেরা পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং যোগ দেন ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ইপিআর-এর ১৫০ জন সৈনিকের দায়িত্বে দেওয়া হয় রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথে। এই জলপথ দিয়ে পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর চলাচল প্রতিরোধের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁদের ওপর। এই দলের এক নম্বর এলএমজি চালক মুন্সি আব্দুর রউফ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলাধীন বাকছড়ির একটি বাঙ্কারে। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বুড়িঘাট এলাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির তীব্রতায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের। কৌশলগত কারণে মুন্সি আব্দুর রউফ তাঁর দল নিয়ে পশ্চাৎপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। সহযোদ্ধাদেরকে নিরাপদে রাখতে নিজে অনবরত গুলি করতে থাকেন পাকিস্তানি সেনাদেরকে লক্ষ্য করে। তিনি একা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাতটি স্পিডবোট একে একে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হন, পাকিস্তানি সেনারা তাদের দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করলে মর্টার শেলের আঘাতে শহিদ হন তিনি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর আগে সহযোগী যোদ্ধারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে যেতে পেরেছিলো। তাঁর আত্মত্যাগের কারনে কোম্পানির প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহী মুন্সি আব্দুর রউফকে অনারারি ল্যান্স নায়েক পদে মরণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে। পিলখানার মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, চট্টগ্রাম রাঙ্গামটি সড়ক, ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাক ব্যাটেলিয়ান (ইসিবি), স্মৃতি স্তম্ভ, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেটে একটি স্টেডিয়াম, ফরিদ পুরে একটি কলেজ বাংলার এর বীরের স্মৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখেছে।