ePaper

ফারইস্ট লাইফের ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ১৪ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক            

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নতুন একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ১৪ জন পরিচালককে আসামি করা হয়।দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির গত ৩১ জুলাই ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ১৭৫তম পর্ষদ সভায়, ৩৬ তোপখানা রোডের ৩৩.৫৬ শতাংশ জমি ও একটি ভবন ২২৯ কোটি ১৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কোম্পানির ১৪ জন পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা।দুদক জানায়, জমি ও ভবনের মূল্য অযাচিতভাবে অনেক বেশি ধরা হয়, যা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। এই ১৪ পরিচালক হলেন, বিমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, যিনি প্রাইম পলিমার ও ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজেরও চেয়ারম্যান। এছাড়া আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হেলাল মিয়া, পিএফআই প্রোপার্টিজ ও নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, মোশারফ গ্রুপের পরিচালক ও মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান নাজনীন হোসেন, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেন, গেটকো টেলিকমিউনিকেশন ও গেটকো এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, প্রাইম ব্যাংক ও প্রাইম ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা এবং ম্যাক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ খালেক, টারটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ড. ইফফাৎ জাহান।এ তালিকায় আরও আছেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রাবেয়া বেগম, স্বতন্ত্র পরিচালক ও আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও পিএফআই সিকিউরিটিজের সাবেক এমডি কাজী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্যাহ-কেও দুদকের মামলার আসামি করা হয়।  এর আগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তিন মামলার মধ্যে ৭০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসামি করা হয় ৯ জনকে। যাদের মধ্যে পরিচালক ছিলেন ৭ জন। তারা হলেন, নজরুল ইসলাম, কে এম খালেদ, শাহরিয়ার খালেদ, এম এ খালেক, মিজানুর রহমান, ফরিদউদ্দিন এফসিএ ও আসাদ খান।

এছাড়া ১১৫ কোটি আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের মামলায় আসামি করা হয় ৮ জনকে। কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাসলিমা ইসলাম, তাসলিমা ইসলামের ভাই সেলিম মাহমুদ, কোম্পানির সাবেক মুখ্য কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহ, সাবেক ইভিপি ও প্রজেক্ট ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার আমির ইব্রাহিম, টিপু সুলতান, ফুয়াদ আশফাকুর রহমান এবং মোহাম্মদ আলম খান।

জমি কেনার বিষয়ে বোর্ডসভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ১৭৫তম পর্ষদ সভায় জমি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এই সভা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রধান কার্যালয়ে। সভায় উপস্থিত কোম্পানিটির ১৪ জন পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এই জমি ক্রয়ের অনুমোদন করেন। সভায় ৩৬, তোপখানা রোডের ৩৩.৫৬ শতাংশ জমি ও ভবনের মূল্য, রেজিস্ট্রেশন খরচ ও অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয় ২২৯ কোটি ১৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০০ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও বিল্ডিংয়ের মূল্য ধরা হয় ৭ কোটি টাকা।

এছাড়াও ট্যাক্স, ফি, রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ আরও ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ও বিবিধ খরচ বাবদ- ১ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। এর মধ্যে বায়না বাবদ ৭৫ কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। বাকি ১৩২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দলিল রেজিস্ট্রির সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্লাহ দলিল গ্রহীতা হিসেবে এবং জমির মালিক আজহার খান ও সোহেল খান দলিল দাতা হিসেবে ঢাকা জেলার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি হয়। দলিল নং-১৮৮১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *