লিয়াকত হোসেন, ফরিদপুর
ফরিদপুরে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লার সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস, জেলা শিক্ষা অফিসার বিষ্ণুপদ ঘোষাল, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফজলে রাব্বী সহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় আলোচনা সভায় বক্তারা ২৫ মার্চের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা করেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন ২৫ মার্চের কালো রাত্রীর সুত্রপাত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান নামক দুইটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরই। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ আচরণ ছিল পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই। আমরা বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলাম। পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বিভিন্নভাবে শোষণ করতো। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’ “১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৪তম ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার লেখা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ শিরোনামে আত্মজীবনীতে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’। প্রায় ৫০ হাজার নিরীহ বাঙালি নিহত হয় এই অপারেশনে। অপারেশন সার্চলাইট” নামক এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম জঘন্য হত্যাকান্ড। ২৫ মার্চ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশকে সুশাসন, ন্যায়বিচার, গনতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত বৈষম্যহীন, দুর্নীতি, গুম-খুন ও অর্থপাচার মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।