লিয়াকত হোসেন, ফরিদপুর
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মুরুটিয়া গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, এতে এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন মাঝারদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হারুন মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়া এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আফছার মাতুব্বরের সমর্থক বেলায়েত মোল্যা। আগে থেকেই দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। এর জেরে দুপুরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ সময় বেলায়েত মোল্যার সমর্থক আজিজুল শেখকে (৪০) কুপিয়ে জখম করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থক কৃষক কবির শেখের বসতঘরে আগুন দেওয়াসহ ১০ থেকে ১২টি খড় ও পাটকাঠির গাদায় আগুন দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক বেলায়েত মোল্যা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য টিটুল মিয়া আমার নিকট সহ এলাকার অনেকের নিকট চাঁদা দাবী করে আসছিল। আমাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে বলে আসছে- এলাকায় থাকতে হলে চাঁদা দিয়ে থাকতে হবে। চাঁদা না দেওয়ায় কয়েকদিন আগে আমাকে মারধর করা হয়। এরপরও আমি চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা করতে আসে। কতক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকা যায়! “মালয়েশিয়া থেকে অসুস্থ হয়ে আসা আজিজুলের কাছেও চাঁদা চায়। আজিজুল যোগাড় করে ৫০ হাজার টাকা দিতে যায় কিন্তু টাকা কম হওয়ায় আজিজুলকে কোপানো হয়। ঘটনা শোনার পর আমরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। পরে ওরা ঢাল-সরকি নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তখন আমরাও ধাওয়া দেই। পরে ওরা আমাদের দলের চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। একজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং কয়েকজনকে কোপানো হয়েছে।” এদিকে বিএনপি নেতা মিন্টু মিয়া ভিন্ন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “রোজার ভেতর পাশ্ববর্তী খলিশপুট্টি মাঠে ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে আমি যাওয়ায় আমার ওপর আফছার চেয়ারম্যানের দুই ছেলে নাজমুল ও স্বপন মাতুব্বর ক্ষিপ্ত হয়। আজকের ঘটনায় ওরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। “গতকাল আমার দলের আকরাম নামের একজন পেঁয়াজ তোলার জন্য ‘কৃষাণ’ চায় ওইপক্ষের দুজনের কাছে। ওরা তখন জানায়, নাজমুল নিষেধ করেছে আমাদের দলের লোকজনকে ‘কৃষাণ’ দিতে। এ নিয়ে আমার দলের লোকজন আজ দুপুরে ওদের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাঁধা দেওয়ার পরেই মারামারি লেগেছে বলে আমি শুনেছি। কোনো চাঁদা চাওয়া নিয়ে মারামারি হয়নি। এখন ওরা মিথ্যাচার করছে।” তিনি অভিযোগ করেন, “আমার দলের অনেককে আহত করা হয়েছে। আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন।” সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, “এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। “একটি বাড়ি ভাঙচুরসহ কয়েকটি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।”