সবুজ দাস, ফরদপুর
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার এই সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও, প্রধান অতিথি নির্বাচন নিয়ে জেলা নেতাদের মধ্যে তীব্র মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় তা আপাতত ভেস্তে গেছে। একইসাথে, কমিটিতে ‘হাইব্রিডের পদায়ন এবং সাবেক আওয়ামী ঘরোনার নেতাদের অনুপ্রবেশ নিয়েও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে চাপা উত্তেজনা ও আলোচনা। সম্মেলনের বিষয়ে, গত সোমবার সন্ধ্যায় ঝিলটুলীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কোতোয়ালি থানা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে দু’জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল: জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেস আলী ঈসা এবং মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। এই দু’জনই জেলা সদরের ফরিদপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। সভা সূত্রে জানা গেছে, কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ছাড় দিতে রাজি নয়। এমনকি প্রস্তুতি কমিটিও অতিথি নির্বাচনের বিষয়টি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। ফলে, সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। কোতোয়ালি থানা বিএনপির প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আশরাফ নান্নু। এই প্রস্তুতি কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুল ইসলাম লিটন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর চৌধুরী রুবেল, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মামুন উর রশীদসহ পাঁচজন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য রশিদুল ইসলাম লিটন জানান, প্রধান অতিথি কে হবেন, সে বিষয়ে তারা একমত হতে পারেননি। উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে বিষয়টি বিভাগীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন টিমের নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলাসহ অন্যান্য ইউনিটে সম্মেলন বাস্তবায়নের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন। সদস্যরা হলেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকু ও সেলিমুজ্জামান সেলিম। ইতিমধ্যে জেলার অন্যান্য থানা কমিটির সম্মেলন শেষ হলেও, কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এখনো অনেক ইউনিটে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে এবং নেতাদের বাড়িতে প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ভিড় করছেন। আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে জেলা, মহানগর, কোতোয়ালি ও উপজেলাসহ সকল ইউনিট কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করে জেলা সম্মেলন করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কিবরিয়া স্বপন জানান, কর্মী সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কিছুটা ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তা পরে জানানো হবে। বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, “ফরিদপুরে সব জায়গায়ই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে হয়তো অতিথি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এখানেও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।” গুরুত্বপূর্ণ কোতোয়ালি থানা কমিটির সম্মেলন ঝুলে যাওয়ায় জেলা ও মহানগর সম্মেলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, সম্মেলনের দিন ডেলিগেটদের ভোটে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় এখন কেন্দ্রীয় কমিটির প্যাডে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি প্রকাশ হতে পারে। এদিকে, অনেকে কমিটি গঠন নিয়ে নানা কথা বলছেন এবং পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ অনেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এখন এসব ইউনিট কমিটিতেও তারা ঢুকবে কি না, তা নিয়েও শোরগোল চলছে। যদিও কেন্দ্রীয় টিম লিডার আসাদুজ্জামান রিপন দলে ‘হাইব্রিড’ নেতাদের অনুপ্রবেশের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে, দলটিতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।