ePaper

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাদা বক বিলুপ্তির পথে

রফিকুল ইসলাম,সিরাজগঞ্জ

বাংলার অতি পরিচিত পাখি সাদা বক। প্রকৃতিতে শুভ্রতা ছড়ানো সাদা বক দল বেঁধে নি:শব্দে চলে। দেখা মেলে খোলা হাওর কিংবা জলাশয়ে। কখনও পুকুর পাড়েও দেখা যায় তাদের। কোথাও আবার ঘন বাঁশ বনে দল বেঁধে বসে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের সবুজ গালিচার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিত এই সাদা বক। নান্দনিক এই পাখিটি এখন বিলুপ্তির পথে। সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় খুব একটা দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, গাছপালা নিধন ও শিকারসহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে এই প্রাণি। বনভূমি উজাড় আর অসাধু পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বক। জলাবায়ু পরিবর্তন আর বনভূমি উজাড়ের কারণে বক যেন আমাদের জনবসতি থেকে অভিমানেই দূরে চলে গেছে। প্রাকৃতিক নান্দনিক পাখি বক, বকের কলরব এখন শুধুই স্মৃতি। আমাদের দেশে রয়েছে পাঁচ প্রজাতির সাদা বক। আকারে ৪৫ থেকে ১শ’ ৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পা ও লম্বা ঠোঁট ছাড়া এদের সারা দেহ সাদা পালকে আবৃত। বিলের মাঝে সুবজ ঘাসে ওঁৎ পেতে আছে পাশের ঝিলে মাছ শিকারের আশায়। এ যেন জলাবায়ু পরিবর্তন আর বনভূমি উজাড়ের কারণে বক যেন আমাদের জনবসতি থেকে অভিমানেই দূরে চলে গেছে। এলাকাবাসী জানান, এক সময় সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলন বিল, কামারখন্দের জবোখালিসহ বিভিন্ন বিলে প্রচুর বকের আনাগোনা ছিল। সন্ধ্যা হলেই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠতো চারপাশ। তবে এখন সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। কামারখন্দ উপজেলার জে ডি বি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, এক সময় ক্ষেত-খামারে কানি ও সাদা বক দেখা গেলেও এখন চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে দু’ একটা দেখা গেলেও শিকারিরা সেগুলো ধরে বিক্রি করে দেন। কামারখন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুল ইসলাম সরকার জানান, ইতোপূর্বে গ্রাম বাংলার নদ-নদী খাল বিলে দেখা যেত সাদা বক। কিন্তু বন বনভূমি উজাড় আর কিছু অসাধু পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যেতে বসেছে এই বক। এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আনোয়ারুল হক জানান, মিঠাপানির জলাশয় এদের দেখা যায়। সাধারণত এরা মাছ, পোকামাকড়, শামুক, ঝিনুক ও ব্যাঙ খেয়ে বেঁচে থাকে। নদী, খাল-বিল, হাওর, পুকুর, ডোবায় এদের দেখা যায়। আমাদের দেশে সাদা বকের সংখ্যা তুলনা মূলক ভাবে বেশি। শস্য ক্ষেতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার ও বিভিন্ন বিল ভরাট এবং পানি না থাকার কারণে বক আজ বিলুপ্তি পথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *