ePaper

প্রতি ১৩ হাজার মানুষের জন্য একজন পুলিশ ভীত-সন্ত্রস্ত কাশিমপুরবাসী

ইউসুফ আহমেদ তুষার,কাশিমপুর

গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানায় বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ৬৩ জন পুলিশ সদস্য। অথচ এ থানার আওতায় বসবাস করছেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ফলে একজন পুলিশ সদস্যকে গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে। দেশের সর্ববৃহৎ এই সিটি কর্পোরেশন মূলত শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। শত শত উৎপাদনমুখী কারখানায় কাজ করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, এর বাইরেও এখানে বসবাস করছেন নানা পেশার মানুষ। আয়তনের দিক থেকে বড় হলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় জিএমপির পুলিশ সদস্যের সংখ্যা অপ্রতুল। পুরো মেট্রোপলিটন এলাকায় সদস্য সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৭৬৫ জন। গাজীপুর মহানগরের আওতায় ৮ টি থানার মধ্যে কাশিমপুর থানাকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের বিপরীতে থানায় দায়িত্বে আছেন মাত্র ৬৩ জন পুলিশ সদস্য। ফলে একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব পড়ছে গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের নিরাপত্তা। শিফটভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করলে প্রতিটি শিফটে থাকেন মাত্র ৩০-৩১ জন পুলিশ সদস্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জিএমপিতে সংঘটিত ডাকাতি ও দস্যুতার বেশিরভাগ ঘটেছে কাশিমপুরে। এমনকি থানার ২০০ গজের মধ্যেই ডাকাতি করে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার হটস্পট হিসেবে পরিচিত বাড়েন্ডার জামাইপট্টি, রওশন মার্কেট, নয়াপাড়া, সুরাবাড়ী, এনায়েতপুর সবুজ কানন, লতিফপুর, সারদাগঞ্জ, মাধবপুর, বেক্সিমকো গেইট এলাকা, লোহাকৈর ও গোবিন্দবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। অপরাধের তালিকায় রয়েছে অনলাইন ক্যাসিনো, জুয়া, জমি দখল, চাঁদাবাজি, খুন ও অপহরণের মতো ঘটনাও। স্থানীয়রা জানান, মাদকসেবীরাই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। বাড়িঘর নির্মাণ করতে গেলে প্রভাবশালীরা চাঁদা দাবি করে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করলেও ভয়ে অনেকে এগোতে পারেন না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রভাবশালী ও অন্যায়কারীদের চেহারা-নাম পরিবর্তন হলেও পরিস্থিতি একই রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আগের সরকারের দলীয় নেতাদের মতোই এখনো নতুন প্রভাবশালীদের ভয়ে থাকতে হয়। কাশিমপুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, কাশিমপুরের নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের চাইতে টহল বাড়ানো হয়েছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোকে শিগগিরই সিসিটিভির আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে নিরাপত্তা নিয়ে নাগরিকদের শঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাবে। এ বিষয় কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, সীমিত সংখ্যক সদস্য দিয়ে বিশাল জনসংখ্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হলেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মাদক ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম রোধে টহল বাড়ানো হয়েছে। কমিশনারের স্যারের নির্দেশনা মেনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *