ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী
নোয়াখালীতে আইনশৃংখলার চরম অবনতি দেখা দিয়েছে। দিন দিন সমাজে অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে। মাদক কারবারি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং এর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জেলাবাসী। সন্ধার পরেই শহর, গ্রামাঞ্চলের পথ ঘাট চলে যায় অপরাধীদের দখলে। মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে সাধারণ মানুষ। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে জেলার সচেতন মহল। জেলায় গত ১০ দিন খুনের শিকার হয়েছে ৭ জন, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ২ জনের। এর বাইরে জেলায় একাধিক চুরি, ডাকাতি, হামলা ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে অনেক অবৈধ অস্ত্রও। এমতাবস্থায় জেলায় শান্তি ফেরাতে ও আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা ও সাধারণ মানুষ। সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর বিয়ের মাত্র ১৭ দিনের জেলার হাতিয়া উপজেলার চর বগুড়া গ্রামে পপি বেগম ওরফে রাশেদা (১৮) স্বামির বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে মৃত্যুর হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী মোহাম্মদ রুবেল, শ্বশুর-শাশুড়িসহ নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। একই দিন হাতিয়াতে চুরির অপবাদ দিয়ে মোহাম্মদ জাফর (১৮) নামে এক কিশোর দিনমজুরকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। নিহত জাফর উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের প্রকল্প বাজার এলাকার মোহাম্মদ জাকের হোসেনের ছেলে। একইদিন সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাংচিল এলাকা আব্দুল মালেক (৮০) এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে। নিহত মালেক উপজেলার গাংচিল এলাকার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে। গত ৩ আক্টোবর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের নতুন ব্রিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরমান হোসেন বিজয় (১৮) নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। নিহত বিজয় উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপুর গ্রামের আশরাফ আলী হাজী বাড়ির শাহীন চৌধুরীর ছেলে। একই দিন বেগমগঞ্জে আবদুর রহমান শুক্কুর (৩৫) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে রাজার পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শুক্কুর একই ইউনিয়নের ছেরু ছেরাং বাড়ির মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। মোবাইল নিয়ে দ্বন্ধের জেরে স্থানীয় হোসেন মাহমুদ সুফল, অভি সহ কয়েকজন পিটিয়ে আহত করে রাস্তায় পেলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তবে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পালাতক। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গভীর রাতে স্বামীর সাথে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে নাসিমা বেগম (২৮) এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তিনিমোহম্মদপুর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের চর নোমান গ্রামের জামালের বাড়ির মাইন উদ্দিনের স্ত্রী। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে জেলা শহর মাইজদীর উত্তর ফকিরপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধু সাদিয়া ইসলাত মীমের(২১) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মীম হাতিয়া পৌরসভার চরকৈলাশ গ্রামের মো.সাব্বির হোসেন হোসেনের মেয়ে। ঘটনার পর থেকেই তার স্বামী লক্ষীপুরের রামগতির চর মসনা এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ পালাতক রয়েছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ফাহিমা সুলতানা ওরফে মারিয়া (২৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাইজদীর রশিদ কলোনির একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম ব্যাচের ফলিত গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ফাহিমার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। একইদিন নোয়াখালীর মাইজদী শহরের বিবি কনভেনশন হল সেন্টারের বহুতল ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে আতিকুল ইসলাম তিতাস (২৫) নামে এক কলেজ ছাত্রকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। নিহত তিতাস চৌমুহনী পৌরসভার হাজীপুর এলাকার শহীদ চেয়ারম্যান বাড়ির আব্দুল গনির ছেলে। কে বা কারা তিতাসকে মেরে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে তা এখনো উদঘাটনা করতে পারেনি পুলিশ। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আবদ্যুলাহ আল ফারুক জানান, আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সব সময় কাজ করছি। বিছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের বিশেষ অভিযানও অব্যাহত আছে।
