নবীনগরে ঈদকে সামনে রেখে কামারদের লোহার জিনিস তৈরি জন্য ব্যস্ততা বেড়েছে

হেলাল উদ্দিন নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগরে ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে কামার শিল্পীদের ব্যস্থতা ততই বাড়ছে। পশু কুরবানিতে ব্যবহৃত দা, বটি, চাপাতি ও ছুরি তৈরিতে ব্যস্থ সময় পাড় করছে তারা, তাই দম ফেলার ও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামাররা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। উপজেলার সোহাতা ভেলানগরের কয়েকজন কামার জানান, লোহার দাম, জ্বালানি সংকট কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রমে তৈরি করা নানান জিনিসপত্র বিক্রি করার সময় আয় ব্যায়ের হিসেবে এই শিল্প এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও অনেকে বাপ দাদার কাছ থেকে পাওয়া অতি পুরনো এই পেশাটাকে মায়ার টানে আকরে ধরে আছেন তারা। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কামারদের আর্থিক টানাপোড়েন ও মলিন মুখ দেখা গেলেও ঈদের আগমনী বার্তায় সেই মলিন মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের বানানো লোহার তৈরি জিনিসপত্র নিজেরাই বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। আবার বিভিন্ন হাট বাজারের বড় বড় ব্যবসায়ীগণ তাদের কাছ থেকে পাইকারী দামে দা, ছুরি, চাকু সহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র দোকানে রেখে খুচড়া বিক্রি করেন। নবীনগর পৌর শহরের বড় বাজারে সাপ্তাহিক দুই দিনের হাট বসে। ওই হাটে এসব পসরার দোকান সাজিয়ে বসেন কামারীরা। সেসব পন্য কিনতে ক্রেতাদের ভীড় চোখ পড়ে। হাটবাজার ছাড়াও ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে কামার পট্টিতে। বিক্রিও হচ্ছে কিছুটা চড়া দামে। কামার শিল্পীরা জানান- পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কামার শিল্পীরা বলেন, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা বলেন- ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। বাঙ্গরা বাজারে মুনিরা জুয়েল নামে একজন মহিলা ক্রেতা বলেন, কুরবানীর কাজে ব্যবহার করতে জবাই করার ছুরিসহ ৪টি জিনিস রিপেয়ারিং করার জন্য এসেছি। আনোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, আমি একটি চাপাতি ৬০০ টাকায় কিনেছি। শ্রীঘর বাজারের কয়েকজন ক্রেতা জানায়, কুরবানির ঈদের সময় কসাই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই একটা নতুন বটি কিনেছি, আর পুরনো চাপতি, দা শাণ দিয়ে নিচ্ছি নিজেরাই কাজে লেগে যাব। ভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ যতই এগিয়ে আসছে দা/ছুরি কিনতে গ্রাহকদের আনাগোনাও বাড়ছে। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- কুরবানি ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুদিন আগে থেকে রাত-দিন বেচাকেনা হবে। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। দুই মাস আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৪শ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন ৮শ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই তারা চাপাতি, ছুরি ও দা’র দাম একটু বেশি নিচ্ছেন। ভোলাচং, সোহাতা, শ্যামগ্রাম, কাদৈর, শ্রীঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও কামার পাড়া ঘুরে দেখা যায়, লাল আগুনের লোহায় পিটুনিতে সরগরম হয়ে উঠেছে কামার পল্লী/দোকান গুলো। টাং শব্দের ছন্দে তালমিলিয়ে চলছে হাতুড়ি আর ছেনির কলাকৌশল। কামার শিল্পের সাথে জড়িত সোহাতার রুবেল কর্মকার জানায়, ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। সে আরো জানায়, নবীনগর উপজেলা ছাড়াও দুরদুরান্তের ব্যবসায়ীরা পাইকারী মালামাল এখান থেকে নিয়ে যান। ঈদে বিপুল চাহিদার জোগান দিতে এক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে তারা। পৌর এলাকার ভোলাচং গ্রামের বিকাশ কর্মকার জানায়, কাজের ব্যস্থতায় নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। এ ব্যস্থতা থাকবে ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *