নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। বুধবার বেলা ১২ টায় বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৪ মে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে সবার প্রিয় অত্র এলাকাবাসীর পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম নামে এএলাকাবাসী জানান, নওগাঁ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাত, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি। বিদ্যালয়ের বার্ষিক আয় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা হওয়া সত্ত্বেও, স্কুলটির অবকাঠামোগত সংস্কার, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান উন্নয়ন এবং স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।সরেজমিনে বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র দেখলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ময়লা। ভবনের বেশিরভাগ জানালার গ্লাসগুলো ভাঙ্গা। এছাড়াও ছেলে ও মেয়েদের দুইটি আলাদা টয়লেট থাকলেও একেবারেই ব্যবহার অনুপোযোগী। ছাত্র-ছাত্রীদের টয়লেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে স্কুলের বাইরে যেতে হয়। মেয়েদের কমনরুমে স্কুলের নাইটগার্ড বিছানা করে ঘুমানোর পাশাপাশি দিনে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের একটি ল্যাব থাকলেও সেখানে থাকা ল্যাপটপগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।শিক্ষার্থী মাহী, সাবা, তিহা ইমরান এবং নাফিজসহ অন্যান্যদের অভিযোগ, ল্যাব থাকলেও তাদের সেখানে বসার তেমন একটা সুযোগ দেওয়া হয় না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করার জন্য নেই কোন সরঞ্জাম; যা আছে সেগুলো খেলার অনুপযোগী।স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম রেজা, দেলোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে আফজাল হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়ে উঠেছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, পদে নিয়োগ দিয়ে ৪৭ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করা হলেও স্কুলের উন্নয়নমূলক খাতে জমা করা হয়নি একটি টাকাও। এছাড়াও গত ১২-১৩ বছরের স্কুলটির বাৎসরিক আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। যা থেকে সামান্য কিছু টাকা বিদ্যালয়ের খাতে জমা দিলেও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নিজস্ব পুকুর গোপনে লিজ দেওয়া এবং গাছ কর্তনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় নিয়ে ইতোমাধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক কমিটির ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিয়োগবানিজ্যের কথা স্বীকার করে বলেন আমিও ৯৫ হাজার টাকা ভাগে পেয়েছি। যা সত্য তাই বললাম এতে শাস্তি হলে মাথা পেতে নেব।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আফজাল হোসেন বলেন, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করছেন। যা মিথ্যা ও বানোয়াট।বিদ্যালয় পরিচালনা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজুল আলম বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে চাই না।এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওয়াসিউর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, এখোনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *