ePaper

তাড়াশে দলিল লেখক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ভূমি ক্রেতারা

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন উপেক্ষা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন খরচের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি ভূমি ক্রেতাদের। শুধু তাই না এতে অনেকে জমি কিনেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না তারা, এমনটাই জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তবে, ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন ২০২৪ অনুযায়ী, ইউনিয়নের আওতাভুক্ত ভূমি রেজিস্ট্রেশন খরচ প্রতি লাখে সাত হাজার পাঁচশ টাকা। আর পৌরসভার ক্ষেত্রে নয় হাজার পাঁচশ টাকা। কিন্তু এর কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায় করে থাকেন তাড়াশের দলিল লেখকরা। তালম ইউনিয়নের চক কোলামুলা গ্রামের ভুক্তভোগী সোলায়মান হোসেন বলেন, তিনি ছয় লাখ টাকায় ৩৩ শতাংশ জমি কিনেছেন। দলিল লেখকরা রেজিস্ট্রেশন খরচ হিসেবে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন, যা তিনি দিতে পারেননি। ফলে দুই মাস ধরে জমির রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মইনুল ইসলাম জানান, তিন লাখ টাকায় ১০ শতাংশ জমি কিনলেও প্রতি লাখে ১৭ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি চাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ঐ গ্রামের এক বাসিন্দার জানান, এক লাখ টাকার জমির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান দলিল লেখক সিন্ডিকেটের জিম্মিদশা থেকে মুক্তির দাবিতে তাড়াশে মানববন্ধনও করা হয়েছে কিন্তু এতে কোনো লাভ হয় নি।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়। বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি সাহাদত হোসেন। সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর তারা দলিল লেখকদের জন্য খাসি জবাই করে নৈশভোজের আয়োজন করেন বলেও জানা গেছে। তবে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি সাহাদত হোসেন সিন্ডিকেটের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন ভূমি ক্রেতাদের অভিযোগ মিথ্যা। বরং আগের থেকে এখন কম টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের নির্দিষ্ট কোনো বেতন নেই। তাই একটু বেশি না নিলে চলবে কি করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। সাবরেজিস্টার অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমি আইন মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি লিখব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি ইউএনও কে ব্যবস্থা নিতে বলে দিচ্ছি।” জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাব হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।” এ প্রসঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের বলেন, বিষটি নিয়ে আমাদের নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাথে কথা বলবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *