ePaper

তরুণদের রাজনীতিতে আনতে জার্মানির বিভিন্ন উদ্যোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। জনগণ কতটা রাজনীতিমুখী তার একটি প্যারামিটার হলো ভোটের হার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে এই হার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, তরুণ ভোটারদের ৭০ শতাংশই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। শুধু ভোট নয়,  প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিতেও এক যুগ আগের তুলনায় তাদের অংশগ্রহণ কমেছে। ২০২৩ সালে করা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রায় ১০০ পাতার একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে তোলার জন্য বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে।ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি অবশ্য আগে থেকেই তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার নানা সুযোগ দেশটিতে রয়েছে। অল্প বয়স থেকেই তাদের রাজনীতি সচেতন করতে সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। জার্মানির সবশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বুন্ডেসটাগের সদস্যদের মধ্যে ৪৬ জনের বয়স ছিল ৩০ বছরের নিচে। যদিও ৬৩০ জন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে এই সংখ্যা বেশ কম বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গত বছরের এই নির্বাচনে সবচেয়ে কম বয়সি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত লুকে হসের বয়স মাত্র ২৩ বছর। জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে প্রতিনিধিত্ব করা সব রাজনৈতিক দলেরই তরুণদের জন্য আলাদা সংগঠন রয়েছে। এর সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ৩৫ বছর। ক্ষমতাসীন সিডিইউ/সিএসইউ এর ‘ইউঙ্গে ইউনিয়ন’-এর সদস্য সংখ্যা ৯০ হাজার, যা ইউরোপে তরুণদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন। জোট সরকারের অংশীদার এসপিডির সংগঠন ‘ইউসোস’-এর রয়েছে ৭০ হাজার সদস্য। গ্রিন পার্টির তরুণ সদস্য ১৬ হাজার। এই সদস্যরা দলগুলোর নির্বাচনি প্রচার, বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম, গবেষণাসহ নানা কাজে যুক্ত থাকে? এদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয় দেশটিতে? যেমন, সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এক সময় ইউসোস এর ফেডারেল ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন।রাজনৈতিক দলের প্লাটফর্মের বাইরে জার্মানির শিশু-কিশোর ও তরুণেরা বিভিন্ন সংগঠনের অধীনে বা স্বাধীনভাবেও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে। পরিবেশ আন্দোলন এর মধ্যে অন্যতম। জার্মান ট্রেড ইউনিয়নের যুব সংগঠনের সদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখ, যারা শিক্ষার্থী বা কম বয়সীদের চাকরি, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠনের সদস্যদের বয়স ২৭ বছরের নিচে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হয়। সংক্ষেপে ‘আস্টা’ নামে পরিচিত শিক্ষার্থীদের এই কমিটি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে ক্যান্টিনের খাবারের মান, ভর্তুকির পরিমাণ, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষক বা প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরবারের মতো বিষয়গুলো থাকে।তবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এই রাজনীতি মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবমুক্ত। জার্মানিতে রাজনীতির পাঠ শুরু হয় মূলত স্কুল থেকে। এজন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্যপর্যায়ে স্কুলশিক্ষার্থীদের জন্য নানা কর্মসূচি রয়েছে। যেমন সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়ার জুনিয়র হাই স্কুলগুলোতে ২০০৯ সাল থেকে তিনটি মডিউলের মাধ্যমে রাজনীতির নিয়ে ধারণা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে কীভাবে দল গঠন করতে হয়, ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া কী, চ্যান্সেলর হওয়ার উপায় কী, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব কী, এমন নানা কিছু শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ১৪ বছর বয়স থেকেই।শুধু ক্লাসরুমের শিক্ষাই নয়, তাদের জন্য প্রতিটি শহরেই রয়েছে ইয়ুথ পার্লামেন্ট, যেখানে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুল থেকেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিল। সারাদেশের স্কুলগুলোর কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় পর্য়ায়ে রয়েছে বুন্ডেসশুল কনফারেন্স। এই প্লাটফর্মে পুরো জার্মানির শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে আলোচনা করে,  নীতি নির্ধারকদের কাছে তাদের মতামত, দাবি তুলে ধরে।জার্মানিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার বয়স ১৮ হলেও বিভিন্ন পৌরসভা ও রাজ্যের নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সেই ভোট দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে তরুণেরা। রাজনীতিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে দেশটির যুব মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনাও তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ধাপে জার্মানি তার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের রাজনীতির পাঠ ও চর্চায় জোর দিয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *