ePaper

ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে নিম্নমানের ইট ও খোয়া দিয়ে চলছে রাস্তা নির্মাণ কাজ

মো. মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় এলজিইডির নতুন সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। কাঁচা সড়ক নতুন করে পাঁকাকরণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইটের খোয়া। অনিয়ম ঠেকাতে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন স্থানীয়রা। এমন অনিয়ম বন্ধে বার বার এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও অজ্ঞাত কারনে কার্যত প্রদক্ষেপ নেই এলজিইডির। এরই মধ্যে ঐ রাস্তার অনিয়মের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এলজিইডি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পান। নিয়ম না থাকলেও ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরবর্তিতে স্থানীয় এক ঠিকাদারের কাছে কাজটি বিক্রী করে দেন। নির্মাণনাধীন ঐ রাস্তাটি রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বড় নুনতোর গ্রামের ভিতর দিয়ে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পাঁকারণের কাজ শুরু করেন, স্থানীয় এক ইট ভাটার মালিক আবু সাইদ। কাজটি বাস্তবায়নে নিজের ইটভাটার সবচেয়ে নিম্নমানের ইট এনে সড়ক নির্মাণ করে যাচ্ছেন তিনি। এতেই ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা, প্রায় মাস খানেক ধরে এমন অনিয়ম চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন কার্যত পদক্ষেপ নেই। অথচ বার বার প্রতিবাদের মুখে দাঁড়িয়েছেন স্হানীয়রা। অজ্ঞাত কারনে এখনও কাজ চলমান রয়েছে নিম্নমানের ইট দিয়েই। ঐ এলাকার ধনিবুল্লাহ, নুর ইসলাম, আনোয়ার হোসেন সহ আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রথমে নিম্নমানের বালু যেখানে মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করেছে ঠিকাদারের লোকজন। বাঁধা দিলেও কোন তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদারদের লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এখন নিম্নমানের খোয়া ফেলছে রাস্তায় যে খোয়া হাত দিয়ে ভাঙ্গা যাচ্ছে এবং হাত দিয়ে খোয়া ভাঙ্গার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এভাবে রাস্তা পাঁকাকরণ হলে দেড় ২ বছর পর রাস্তা আবার নষ্ট হয়ে যাবে। জানা গেছে, ঠিকাদার কাজটা আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আর সে কারনে তড়িঘড়ি করে কাজ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কয়েকবার ঠিকাদারের ইটবাহী ট্রলি আটকে দিয়েছিল গ্রামবাসী। রাস্তায় নিম্নমানের ইট ফেলতে দেয়নি। তখন নিম্নমানের ইট না ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাস্তার আরেক প্রান্তে ফেলে যায়। এরপরে রাতের আধারে সব খোয়া ফেলেছে ঠিকাদারের লোকজন। পরে আবার বাধা দিতে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে রাস্তার কাজ পড়ে থাকবে কয়েক বছর। এমন হুমকিও দেন ঠিকাদারের লোকজন। এ কাজের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার জানালেও তিনি কর্ণপাত করেনি। সবাই যেন, টাকা খেয়ে নিরবতায় রয়েছেন। পরবর্তিতে রানীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলী আনিসুর রহমানকে জানালেও কোন পদক্ষেপ নেননি। অজ্ঞাত কারনে তারা চুপচাপ এই সুযোগে কাজ বাস্তবায়ন করে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বর্তমান ঠিকাদার। গ্রামের ভেতর সড়কটির কাজ চলমান থাকলেও ঠাকুরগাঁও জেলার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তদারিকি ছাড়াই খেয়াল খুশিমত রাস্তা নির্মাণের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি করে দেয়া কাজ। এসব অনিয়ম বন্ধ করে ভালো মানের রাস্তা নির্মাণের দাবি এলাকার সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহলের। এ বিষয়ে কাজ বাস্তবায়নের সাথে জড়িত আবু সাঈদ জানান, আমি কি কাজ করছি তা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অবগত। খারাপ কাজ মনে হলে ব্যবস্থা নিবে। এর বাইরে তিনি আর কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান স্বীকার করে বলেন, কাজে অনিয়ম হচ্ছে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি রানীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। রানীশংকৈল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান জানান, কাজটি অনেক দুরে এবং ৩ দিন অফিস ছুটি থাকায় দেখাশোনা করা সম্ভব হয়নি। তবে খোঁজ খবর নেয়া হবে। অনিয়ম বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও এলজিইডির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন বিশ্বাস জানান, কাজ ভাল না হলে ঠিকাদারের বিল বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে বিষয়টি জেনেছি। তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *