ePaper

ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ উপলক্ষে সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে টিসিবি বিতরণ

মো. মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে ১১০২ জন টিসিবি সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত টিসিবি কার্ডধারি ১১০২ জন সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মাঝে এই টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় টিসিবি পণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডের ৫ শত ২৮ টি পরিবার। দেড় মাস পার হলেও স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পুরোনো এই কার্ডধারীরা। তারা রমজান মাসেও পাচ্ছেন না স্বল্পমূল্যের টিসিবি পণ্য। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী টিসিবি কার্ডধারীরা। এদিকে সরকারের ওপর দায় চাপাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এদের কার্ডগুলো নবায়ন করে স্মার্ট কার্ডে পরিবর্তিত করতে জমা নেওয়া হয়। গত ১৩ জানুয়ারি ছিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১১০২টি স্মার্ট কার্ড বিতরণ করে চিলারং ইউনিয়ন। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস অব্দি এখন পর্যন্ত ২ বার তাদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাকি থাকা ৫ শত ২৮ টি অসহায় পরিবার বঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দেড় মাস পার হয়ে গেলেও যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়ায় স্মার্ট কার্ড হাতে পাননি সুবিধাভোগী পরিবারগুলো। টিসিবি ডিলার জানান, রমজান মাস উপলক্ষে ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি ছোলা ও ৫ কেজি চালের প্যাকেজ ৬শত টাকায় বিক্রি করা হয়। গত ১৬ মার্চ রবিবার ৭ নং– চিলারং ইউনিয়ন পরিষদে বিক্রি হয় স্বল্পমূল্যের এসব টিসিবি পণ্য। ৬০০ টাকা হাতে নিয়ে টিসিবি পণ্যে নিতে ছুটে আসেন জাহানারা বেগম(৫২), মাজেদা নেগম(৫৬), মেহেরুন বেগম(৬০), সুফিয়া বেগম ৫৫, আবু তালেব(৪০), আব্দুর রহিমসহ (৩৫) অনেকেই। কিন্তু লাইনে দাড়ালেও স্মার্ট কার্ড না থাকায় তাদেরকে দেওয়া হয়নি স্বল্পমূল্যের পণ্য। পরে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় তারা বলেন, পুরোনো টিসিবির কার্ড নিয়ে স্বল্পমূল্যের পণ্য কিনতে এসেছিলাম। শুনছিলাম পুরোনো কার্ডেই দেবে। কিন্ত দেখি স্মার্ট কার্ড ছাড়া কারো কাছে টিসিবির মালামাল বেঁচে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ‘হামাক স্মার্ট কার্ড না দেওয়ায় ‘২ মাস যাবৎ টিসিবির মালামাল কিনতে পারি না। রমজান মাসেও কিনতে পারলাম না। বাজার থেকে চড়া দামে চিনি, তেল, ডাল, ছোলা, চাল কেনা আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেকক্ষণ দাড়াইছিলাম তারপরও দিল না। জাহানারা বেগম নামে এক বৃদ্ধ মহিল বলেন, ”হামা গরিবলা ভাত খাবারে চাওল পায়না আর যেইলা লোক পাছে উমা পাশত লাগাই বিক্রি করে দেছে নাহইলে গরু ছাগলক খিলাই ফিলাছে”। ৭ নং– চিলারং ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার মেসার্স নেছার আহমেদ এন্ড ব্রাদার্স স্বত্তাধিকারী নূর মোহাম্মদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে সরকারের নিয়ম মাফিক সংশ্লিষ্ট পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্যদের সার্বিক সহযোগিতায় পণ্যগুলো বিতরণ করছি। মোবাইল অ্যাপসে ডিজিটাল স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ করার কারণে একজনের পণ্য অন্যকে প্রদান করার কোন সুযোগ নেই। টিসিবি বিতরণের সকল তথ্য সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারে সংরক্ষিত হওয়ার কারণে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা চাইলেই সকল তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন। তাই টিসিবি বিতরণে কোন অনিয়ম করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শোভা আলী বলেন, প্রতিবার ১৬৩০ জনকে টিসিবি পণ্য দিয়ে আসলেও এবার কেবল ১১০২ জন স্মার্ট টিসিবি কার্ডধারী এই সুবিধা পাবেন। বাকিরা অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে স্মার্ট টিসিবি কার্ড ধারী যাদের ভেরিফিকেশন হচ্ছিল না তাদের প্রত্যেককে ভেরিফিকেশন করে টিসিবি পণ্য দেয়া হয়েছে। যেহেতু মোবাইল অ্যাপসে প্রতি গ্রাহকের তথ্য পূরণ করে টিসিবি পণ্য দিতে হচ্ছে, সেহেতু একটু সময় লাগতে পারে। আর যাদের কার্ড অনলাইন হয়ে আসেনাই পর্যায়ক্রমে আসবে বলে জানান তিনি। কোন হট্টগোল না করে ধৈর্য্য সহকারে ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের শান্তিপূর্ণভাবে টিসিবি পণ্য গ্রহণ করে সরকারের ভালো উদ্যোগকে শতভাগ সফল করার প্রতি আহবান জানান। রমজান মাসের শুরুতেই সুবিধাভোগীরা টিসিবি পণ্য পেলেন না তবে সামনে পুরোনো কার্ডে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড ছাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি ডিসি স্যারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। পরবর্তী সময়ে যদি কার্ড না হয় সেই ক্ষেত্রে হয়তো ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা টিসিবি অফিস থেকে ভালো বলতে পারবে। এই বিষয়ে চিলারং ইউনিয়নের সচিব শামসুজ্জামান বলেন, ইউনিয়নে ১১০২ জনকে টিসিবি কার্ডধারি পরবারকে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। যারা কার্ড পায়নি তারা কার্ড পাবে কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করতেছে সরকারের উপর। যেহেতু ডিজিটাল স্মার্ট কার্ডের মাধমে টিসিবি বিতরণ করা হচ্ছে, সেহেতু কোন প্রকারের অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *