ePaper

ঠাকুরগাঁওয়ে আলু চাষ করে দুঃশ্চিন্তায় কৃষকরা

মো. মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও

দুই মাস আগেই বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম উঠেছিল ৭৫/৮০ টাকা পর্যন্ত। তাতে ৩৩ শতক জমিতে আলু চাষ করে ভালো লাভ করেছিলেন ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের দক্ষিণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাসিন্দা আলুচাষি শমসের আলী। বেশি লাভের আশায় এবারো তিনি ধার- মাহাজন করে এক একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু বাজারে এখন আলুর দাম কমেছে। তাই লাভের বদলে দেনা পরিশোধ নিয়েই দুঃচিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। ২০ দিন আগে শমসের আলী আড়তে যে আলু প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। সেই আলু গত সপ্তাহে বিক্রি করেন ১৩ টাকা কেজিতে। তাতে লাভের আশা তো দূরের কথা, চাষের দেনা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। শুধু শমসের আলী নয়, আগাম আলু চাষ করে জেলার শত শত কৃষক এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। গতবার ভালো লাভ পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভের আশায় এবারও চাষিরা নানা জাতের আগাম আলুর চাষ করেছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষে আলু রোপণ করে নভেম্বরে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। তবে এবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে খেতের বীজ নষ্ট হয়ে যায় কৃষকের। এ কারণে নতুন বীজ রোপণ করতে হয়েছে। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাষের খরচও বেড়েছে। কিন্তু আগাম জাতের সেই আলু বিক্রি করে এখন লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা জানায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় মৌসুমের শুরুতেই প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। এখন মাঠে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজিতে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ভাঙাকোয়াটার এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকার বেশি। আলু পাওয়া গেছে ২ হাজার ৬০০ কেজি। তাতে প্রতি কেজি আলু চাষে খরচ পড়েছে ২৩ টাকার বেশি। সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকায়। তাতে কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী বড় পলাশবাড়ি এলাকার আলুচাষি মাজেদূর রহমান জানান, তিন বিঘা জমিতে গ্র্যানুলা জাতের আলু আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকার বেশি। আলু পেয়েছেন ১৯৫ মণ। ১২ টাকা দরে সেই আলু বিক্রি করে পান ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা। তাতে তাঁর লোকসান হয়েছে ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা। রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের কৃষক নাজমুল বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে দুই বিঘার আলুর বিক্রি করেছি। তখন অল্প কিছু লাভ হয়েছে। কিন্তু এখন ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। আলু যে রেখে দেব, তারও উপায় নেই। কারণ, আগাম আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায় না। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছোট বালিয়া এলাকার আলুচাষি মোস্তফা বলেন, বাজারে দাম বাড়লে মানুষ কত কথা বলে। সরকারও দাম বেঁধে দেয়। এখন প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। সরকারেরও কোনো পদক্ষেপ নেই। কৃষকের মাঠ ঘুরে ঘুরে আলু কেনেন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে এক কেজি আলু ৮০ টাকায় কিনেছি। গত সপ্তাহেও মাঠ থেকে ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিতে আলু কিনেছি। এখন সেই আলু কিনছি ১৩ থেকে ১৪ টাকায়। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার কৃষক যখন একটি ফসলে লাভ পান, তখন অন্যরাও সেটাতেই ঝোঁকেন। চলতি বছরে আলুর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচটাও একটু বেশি পড়ছে। কিন্তু বাজারে দাম কম। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের লাভ কম হলেও লোকসান হবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *