ePaper

ট্রাম্পকে রাগিয়ে রাশিয়ার ‘সস্তা তেল’ কিনে ভারতের কতটা লাভ হলো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক          

রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হলেও এ আমদানির আর্থিক সুফল স্পষ্ট। ভারতের সরকারি বাণিজ্য তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৩৯ মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে ভারতীয় রিফাইনারিগুলো অন্তত ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে।

তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুতে যে সাশ্রয়ের আশা করা হয়েছিল তা হয়নি; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার তেলের কার্যকর ছাড় কমেছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা সবচেয়ে কম পর্যায়ে নেমেছে।

তেল আমদানিতে ছাড় ও সাশ্রয়

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভারতের তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল দুই শতাংশেরও কম। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেল বর্জন করার পর মস্কো ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি শুরু করে। ভারতীয় রিফাইনারিগুলো সেই সুযোগ নেয় এবং কয়েক মাসের মধ্যেই রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। বর্তমানে ভারতের মোট তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসে রাশিয়া থেকে।

* ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত ১৬২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করে। রাশিয়ার তেল না কিনে অন্য দেশ থেকে কিনলে এই খরচ আরও ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার বেশি হতো।

* ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাশিয়ার তেলের কার্যকর ছাড় কমলেও সাশ্রয় দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার, কারণ আমদানি বেড়ে যায় প্রায় ৬০৯ মিলিয়ন ব্যারেল।

* ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছাড় নেমে আসে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশে। এতে সাশ্রয় হয় মাত্র ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

* ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুন প্রান্তিকে ছাড় কিছুটা বাড়ে, ফলে প্রায় ৮৪০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়।

অনুমানভিত্তিক সাশ্রয় আরও বড়

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বিপুল পরিমাণ রুশ তেল কেনা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে। ফলে প্রকৃত সাশ্রয় আরও অনেক বেশি। অনুমান করা হচ্ছে, যদি ব্যারেলপ্রতি গড় দাম ১০ ডলার বেশি হতো, তাহলে গত ৩৯ মাসে ভারতের তেল আমদানি খরচ আরও প্রায় ৫৮ বিলিয়ন ডলার বেশি হতো। আর দাম যদি ২০ ডলার বাড়তো, তবে বাড়তি খরচ দাঁড়াতো প্রায় ১১৬ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ভারতের অবস্থান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মনে করে, রাশিয়া থেকে ভারতের বিপুল তেল আমদানি মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে বড় আঘাত হানতে পারে।

তবে নয়াদিল্লি বলেছে, এ পদক্ষেপ ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’। ভারতের দাবি, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেল কিনতে অস্বীকৃতি জানানোর পরই ভারতকে আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত করা হয়েছিল যাতে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল থাকে।

ভারতীয় সরকার বলছে, তারা যেখান থেকে সবচেয়ে ভালো দামে তেল পাবে, সেখান থেকেই কিনবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই তেল নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকে। বর্তমানে রাশিয়ার তেলের ওপর সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই; কেবল পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত মূল্যসীমা রয়েছে, যা তাদের শিপিং ও বিমা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *