ePaper

টানা ভারী বৃষ্টির পানিতে বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা মাহীন দুর্ভোগ

শিহাব উদ্দিন (নোয়াখালী) বেগমগঞ্জ

টানা ভারী বৃষ্টির পানিতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাসা বাড়িতে পানি ঢুকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডুবে গেছে হাঁটু পানিতে। এ ছাড়াও বেগমগঞ্জের চৌমুহনী শহরসহ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামিন সড়ক, উপ-সড়ক, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডুবে গেছে হাঁটু পানিতে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা) বেগমগঞ্জসহ নোয়াখালীতে থেমে থমে মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বেগমগঞ্জে অধিকাংশ ছোট বড় সরকারী রেকডিয় খাল এবং কালবার্ড গুলোর পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে অরিকল্পিত বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও মৎস্য প্রজেক্টের নামে খালের উপর অবৈধভাবে বাঁধ সৃষ্টি করায়পানি নামতে না পারায় বর্তমানে জনদুর্ভোগ চরমে পৌচেছে। শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম দুর্বলতায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, রোগী ও সাধারণ পথচারীরা। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় চৌমুহনী শহর তলীতে অবস্থিত প্রাচীনতম বেগমগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকায় হাঁটু পরিমান পানি এবং নোংরা পানিসহ ময়লা আবর্জনায় একাকার। সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার চৌমুহনী শহরসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা যায়, রাস্তায় পানি উঠায় কোথাও কোথাও রিকশা, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। চৌমুহনী শহরের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছরই একটু বৃষ্টি হলেই শহরের এমন জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ও সক্রিয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থেকেই স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরে অপরিকল্পিত আবাসন ও দোকানপাট গড়ে তোলার ফলে বৃষ্টির পানি আর কোথাও যেতে পারে না। যদি এখনই টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে চৌমুহনী শহর স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। এছাড়াও টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘের ও পোল্ট্রি খামার ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। বিশেষ করে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, কাদিরপুর, খানপুর, গনিপুর, শরিফপুর, জিরতলী, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, একলাসপুরসহ চৌমুহনী পৌর এলাকার অধিকাংশ নিচু এলাকায় এমন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শহরের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, টানা বর্ষণ এর ফলে পানিতে ডুবে আছে কাঁচা ও আধাপাকা সড়ক। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। হেঁটে চলা পথচারীদেরও পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বৃষ্টির পানি জমে অনেক দোকানপাটে পানি উঠে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পণ্যসামগ্রী। বেগমগঞ্জের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, খাল-বিল নালা-নর্দমা হচ্ছে পানি নামার স্বাভাবিক পথ। সেগুলো অবৈধ ভাবে দখল ও ভরাট করে পানি চলাচল বন্ধ করে দিলে জলাবদ্ধতাতো হবেই। নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেগমগঞ্জ সহ জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি পেয়েছে। ১০ জুলাই থেকে আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা প্রস্তুত থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাত নাসিমা হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা আওহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েকদিন জেলায় টানা বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *