টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় পাহাড়ী অঞ্চলে রাতের আঁধারে এক যোগে চলছে ফসলি জমি ও লাল মাটিতে মাটি খেকোদের তান্ডব। ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পাহাড় ও ফসলি জমি, হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এই কার্যক্রম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে করছে জরিমানা। দেওয়া হচ্ছে জেল। তার পরেও থামানো যাচ্ছে না মাটি কাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাল মাটি ও ফসলি জমি কাটার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা প্রভাবশালী একটি মহল। ঘাটাইল উপজেলার পুর্বে এক তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে বিশাল পাহাড়ি বনাঞ্চল। রাতের আঁধারে মাটি খেকোরা এক্সকাভেটর (বেকু) দিয়ে পাহাড়ি লাল মাটি ও ফসলি জমি কেটে বাড়ি ঘর নির্মান থেকে শুরু করে এ মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রশাসনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় কিছু অসাধু মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা ভেকু দিয়ে সন্ধানপুর ইউনিয়নে ফকিরবাড়ি, গিলাবড়ি, ধলাপাড়া বড় মেধা গ্রাম, হরিনাচালা, রসুলপুর ইউনিয়নে ঘোড়ার টেকি, দেওপাড়া ইউনিয়নের, সংগ্রামপুর ইউনিয়নে কাউটেনগর, কামারচার, বোয়ালীচালাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় প্রতিরাতেই অবৈধ ভাবে মাটি কাটছে। মাটি খেকোরা ১০-১৫ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে, ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ার সময় গ্রামীন জনপথ এবং পাকা রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে, রাস্তার ধুলায় পাশে থাকা ফসলের মধ্যে প্রলেপ পড়ে যায়, শুধু তাই নয় ধুলা ঢুকে যাচ্ছে দোকান পাট ও বসত বাড়ির ঘরের ভেতর। এতে অনেকেই শর্দি কাশি শ্বাসকষ্টে ভূগছে। ফলে রাস্তা ঘাটে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়েছে। যার কারনে দুর্ভোগ প্রহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। এলাকাবাসীর তথ্য মতে, উপজেলার ঝড়কা থেকে বিভিন্ন গ্রাম হয়ে টিলার কোল ঘেঁষে প্রায় ১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক চলে গেছে দেওপাড়া বাজার পর্যন্ত। এ রাস্তার পাশেই ছিল ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু বেশ কিছু টিলা। গত দুই-তিন বছরে এসব টিলা কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। আর গত তিন বছরে উপজেলার দেওপাড়া, চেচুয়াপাড়া, ঘোড়ামারা, সিংহেরচালা, খাগড়াটা, বারইপাড়া, নলমা, কুশারিয়া, চেড়াভাঙ্গা, বগা, কাজলা, শালিয়াবহ, সরাবাড়ী ও বগা এলাকার টিলা কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের কৃষক মাইন উদ্দিন, রসুলপুর গ্রামের রিফাত ইসলাম ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ঘোনার দেউলী এলাকার শহিদুল ইসলাম, মাজহারুল, রসুলপুর এলাকার আজমান, মমিনপুর এলাকার আশরাফুলসহ এই উপজেলায় শতাধিক মাটি ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ফসলি জমির ও লাল মাটির কাটা এবং স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর এসব মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কেটে বিক্রি করছেন বসতবাড়ীসহ স্থানীয় ইটখোলার মালিকদের কাছে। সংগ্রামপুর ইউনিয়নের নলমা গ্রামের অটো চালক মুজাফফর আলী জানান, টিলা এবং জমি থেকে মাটি কাটার ফলে বড় বড় গর্ত সৃষ্ট হয়েছে। ফলে রাস্তায় চলাচলে তৈরি হয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি। যানবাহন এসব গর্তে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনায় শিকার হতে হয়। রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মর্তুজ আলী বলেন, পাহাড়ের লাল মাটি ও ফসলি জমির মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। আইনে আছে কোনোভাবেই পাহাড়ের লাল মাটি কাটা যাবে না। লাল মাটি ও ফসলি জমি কাটা বন্ধে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে ঘাটাইল ধলাপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান জানান, কেউ বন বিভাগের জমি থেকে লাল মাটি কাটলে আমরা অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যহত থাকবে। ঘাটাইল উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) সাবরিন আক্তার বলেন, গত কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫টি বেকু থেকে ১০টি ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ বা তথ্য পেলে অভিযান পরিচালনা করে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।