রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, “জুলাইয়ের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে দেশের গণ-অভ্যুত্থানের নতুন শক্তিকে সংগঠিত করতে হবে, যাতে সব শক্তির মধ্যে কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভার মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘গণ-অভ্যুত্থান, জন আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভবিষ্যৎ’।
রাজনৈতিক চেতনার প্রয়োজনীয়তা
আলোচনায় জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা এখনো গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যেই আছি। জনগণের সম্মিলিত মর্যাদার ওপর আঘাত হানার কারণে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে। তবে এই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শক্তির মধ্যে বাস্তবতা ও প্রত্যাশার ব্যবধান রয়েছে।” তিনি জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আপনারা যাদের ক্ষমতায় বসাচ্ছেন, তাদের মধ্যে জবাবদিহিতা ও ভারসাম্যের উপস্থিতি আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক সচেতনতা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।”
গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ প্রতিষ্ঠার আহ্বান
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, “গণতন্ত্রের মূল ধারণা হলো জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের উপর প্রভুত্ব করেন। এটি বদলাতে জনগণের মধ্যে নতুন শক্তি জাগ্রত করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর এক বিরাট শিক্ষা দিয়েছে।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, “১৪ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ এ দেশে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও জাতীয় চেতনা জুলাই অভ্যুত্থানে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।”
অভ্যুত্থানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আলোচনা সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের সূচনা করেছে।”
অনুষ্ঠান সম্পর্কে
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম। আয়োজনটি করেছে সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘উত্তরণ’ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘যোগসূত্র’। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উপসংহার
জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং সংগঠিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। এই অভ্যুত্থান দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Share Now