ePaper

জামায়াতকে নিয়েই নিশ্চিত ঐক্যের পথে ইসলামি দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসলামি দলগুলোর ঐক্যযাত্রা এখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই জামায়াতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ঐক্য কতটা দৃঢ় হবে, তা নির্ভর করছে আসন সমঝোতা ও নীতিগত সমন্বয়ের ওপর। তবে নেতাদের প্রত্যাশা-সব মতভেদ ও আদর্শিক দূরত্ব পেছনে ফেলে একক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে পারবে ইসলামি শক্তিগুলো। এতে জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হতে পারে নতুন সমীকরণ, যা নির্বাচনী মাঠে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
গত বছর ৫ আগস্টের পর ইসলামি দলগুলো নিয়ে ঐক্যের ডাক কিংবা এক প্ল্যাটফর্মে আনার আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরপর এ প্রক্রিয়ায় সরব হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছে ইসলামি দলগুলো। তবে আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপাতত প্রতিটি দল নিজস্ব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। সামগ্রিক ঐক্যের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।
ঐক্যের প্রক্রিয়াটি খুবই পজিটিভলি এগোচ্ছে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দীন বলেন, ‘ঐক্যের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। সবাই নিজ নিজ দলে কাজ করছি। মতভেদ, আদর্শিক বিভক্তি এখন আর নতুন বাংলাদেশে কোনো ইস্যু হবে না। ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের প্রক্রিয়াটি খুবই পজিটিভলি এগোচ্ছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ, মতভেদ ভুলে সবাই পাশে থাকবে। ঐক্য হবেই।’ জামায়াতসহ ঐক্য হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঐক্যের ব্যাপারে পজিটিভ। আশা করি সমঝোতাও হবে।- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মো. ইউনূস আহমেদ
জামায়াতসহ ঐক্য হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মো. ইউনূস আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সবাই পজিটিভ আছে। কওমি ঘরনার যারা আছে তারা তো সবাই মোটামুটি এক হয়ে আছে। সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ, মিটিং চলমান। এরপর শিডিউল ঘোষণার আগে বা পরে আমরা বসে আসন বণ্টনের মাধ্যমে সমঝোতা করবো। আমরা সমঝোতার দিকে যাচ্ছি এটা নিশ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতসহ ঐক্য হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঐক্যের ব্যাপারে পজিটিভ। আশা করি সমঝোতাও হবে। আপাতত প্রত্যেক দল তার এলাকায় কাজ করছে। আসন সমঝোতার সময় কে কোথায় নির্বাচন করবে, তখন সে সিদ্ধান্ত হবে।’
বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে: জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। রাজনীতিতে দলে টানার চেষ্টা ওপেন বিষয়। তবে বিএনপি একটা পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে যদি সব জায়গায় মৌলবাদের গন্ধ পায়, তাহলে তারা বা ইসলামি দলের সঙ্গে কীভাবে যাবে? ইসলামি দলও বা তাদের কাছে কীভাবে যাবে? আমরা ঐক্যের ব্যাপারে আশাবাদী ও পজিটিভ মাইন্ডে আছি। সমোঝতার জন্য সবাই কাজ করছি।’ গত ২৫ জুলাই এক বৈঠকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্য প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন কওমি ঘরানার চার দলের শীর্ষ নেতা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনূস আহমদ।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও ইসলামি দলগুলোর ঐক্য জামায়াতকে নিয়েই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বিএনপির তো কোনো চরিত্র পরিবর্তন হয়নি: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা নতুন শক্তিকে সামনে আনতে চাই। বিএনপির তো কোনো চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। অতীতে তারা যা চেয়েছিল এখনো তাই করছে, সামনেও তাই করবে। যারা পুরাতন রাজনৈতিক কালচারের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চায়, যারা জুলাইকে সঠিকভাবে ধারণ করে না, তারাই হয়তো বিএনপির সঙ্গে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতের বাইরে যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে সেখানে ইসলামি শক্তির যে ভোট বাক্স, সেটা তো কার্যকর হবে না। তাহলে ইসলামপন্থি ভোটগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে। এই ঐক্য তো মিনিংফুল হবে না।’ আদর্শিক দ্বন্দ্ব ঐক্যে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব দলেই মতপার্থক্য আছে। আমরা যার যার জায়গা থেকে বৃহত্তর স্বার্থে কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছি। আমরা তো একদল আরেক দলে যোগ দেবো না। আলাদা আলাদা দল থাকবে, যার যার নীতি-আদর্শ কৌশল থাকবে, কিন্তু ভোটার যাতে বিভক্ত না হয় সে বিষয় এক হতে হবে।’
‘এখানে অনেক চিন্তার লোক আছে। আহলে হাদিসও আছে। তাদের সঙ্গে তো অনেকের মতবিরোধ আছে, কিন্তু নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের এক হতে হচ্ছে। সবার ভোট আমাদের প্রয়োজন। সবাই দেশের নাগরিক। এখন কারও সঙ্গে আমার আকিদার মিল নেই, তাই বলে কি আমরা তাদের দেশ থেকে বের করে দেবো?’ যোগ করেন গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সবাই দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত মুহূর্তে বোঝা যাবে। এখন আমরা চেষ্টা করছি, সবার মধ্যে আমরা আন্তরিকতাও লক্ষ্য করছি। সাধারণ মানুষও ঐক্য চাচ্ছে। তাদের বিশ্বাস এবার হয়তো ইসলামপন্থিরা এই সুযোগটা কাজে লাগাবে।’
আমাদের ঐক্য ফলপ্রসূ হবে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। জুলাই সনদ, সংস্কার- এগুলো আসলে এটার সঙ্গে যুক্ত। এগুলো হয়ে গেলে জোটের বিষয়ে একটা সমাধান হয়ে যাবে। আশা করছি, আমাদের ঐক্য ফলপ্রসূ হবে। আমরা আশাবাদী, সুনির্দিষ্ট হলে আমরা একটা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারবো। প্ল্যাটফর্মের নাম এখনো নির্ধারণ হয়নি। যে নামেই হোক, বা যে ফরম্যাটেই হোক একসঙ্গেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *