ePaper

জাতিসংঘ নারী সম্মেলনে জবাবদিহিতা কাঠামো গঠনের আহ্বান শারমীন এস মুরশিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি-৫ অর্জনে একটি বাধ্যতামূলক বৈশ্বিক জবাবদিহিতা কাঠামো গঠনের প্রস্তাব দেন। শারমীন এস মুরশিদ বলেন, তিন দশক পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। সংঘাতপূর্ণ এলাকা, জলবায়ু সংকট ও নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে কিছু সাফল্য এলেও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সমস্যা দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং অসম জাতীয় অগ্রাধিকার। তাই আমাদের বিবেক ও ভালোবাসা দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি যত্নশীল সভ্য সমাজ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস, লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন স্কোর অর্জন বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে। তবে সামাজিক রীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং দক্ষতার ঘাটতির কারণে নারীরা এখনও পিছিয়ে আছে। তাই স্বেচ্ছাসেবী অঙ্গীকারের পরিবর্তে বাস্তবায়নযোগ্য অঙ্গীকার গ্রহণ জরুরি। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, নারীরা বাংলাদেশের ইতিহাসকে রূপ দিয়েছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে যে সংস্কারের পথ প্রশস্ত হয়েছে, তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ চারটি প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো- ২০২৫ সালের মধ্যে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও দ্রুততম সময়ে সেবা পৌঁছে দেওয়া, ২০২৭ সালের মধ্যে নারীর অবৈতনিক কাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে গৃহস্থালি উৎপাদনমূলক স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট চালু, জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করা, সরকারি প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট সম্প্রসারণ। তিনি বলেন, এই চারটি প্রতিশ্রুতি-নিরাপত্তা, স্বীকৃতি, সমতা ও জবাবদিহিতা-প্রকৃত রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের এজেন্ডা নির্ধারণ করেছে। তবে কোনো দেশ একা সফল হতে পারে না। এজন্য বৈশ্বিক জবাবদিহিতা কাঠামো অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, ত্রিশ বছর আগে বেইজিং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিল, এখন সময় এসেছে কর্মভিত্তিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটিকে সম্মান জানানোর। তিনি কেয়ার ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পরিকল্পিত অর্থনীতি কেবল সামাজিক চাহিদা পূরণই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও চালিকাশক্তি। যত্নসেবা খাত উন্নত, নিরাপদ ও দক্ষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ সৃষ্টি করে। এ খাতের উন্নয়ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কেয়ার সেবা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তরুণদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এখন জরুরি। কর্মশক্তির উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে সেবাখাতের বিস্তার অপরিহার্য। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বাংলাদেশ গর্বিত। টেকসই নীতিগত ব্যবস্থা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সেবাখাত উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে রূপান্তরমূলক সেবা ব্যবস্থাপনার দিকে। প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফিরোজ উদ্দিন খলিফা, যুগ্মসচিব দিলারা বেগম এবং উপসচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *