মো. তাসলিম উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইল
সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবলের সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকা এবং সমন্বয়হীনতার কারণে রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। এই সমস্যার কারণে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৩০ জন, কিন্তু বাস্তবে আছেন ১৭ জন, যা এই সংকটের প্রধান কারণ। এছাড়া, কনসালটেন্টসহ বিভিন্ন পদে ১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবায় ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও করা হয়। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৫০০-৬০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এর সুফল পাচ্ছেন না উপজেলাবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ১ম শ্রেণির ৩০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৭ জন, ৩য় শ্রেণির কর্মরত আছেন ৮০ জন, ৪র্থ শ্রেণির কর্মরত আছেন ১৯ জন। এখানে ১৭ জন ডাক্তার কর্মরত দেখানো হলেও প্রেষণে রয়েছেন পাঁচজন ডেপুটেশনে। দূইজনকে পদায়ন করা হলেও এখনো যোগদান করে নাই। এছাড়াও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু, জুনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি, ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও কোনো কনসালট্যান্ট ডাক্তার নেই। চিকিৎসা নিতে সরাইল উপজেলা সদরের আবুল কালাম (৫০) আক্ষেপ করে বলেন, চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে আমরা পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে জানতে পারলাম নিউরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, এখন বাধ্য হয়ে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে আসা রোনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে অসুস্থ, কিন্তু এখানে এসে দেখি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সরাইল উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদন এড. নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, আমাদের উপজেলার অনেক মানুষ দরিদ্র। তাদের বেশির ভাগই সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীরা সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই উপজেলা বাসীর সুবিধার্থে সুচিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন। উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, হাসপাতালে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। যেটুকু জনবল আছে তা দিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরেও আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে অনেক সময় হিমশিম খাচ্ছি। রোগীদের চাপ সামলাতে সব শূন্য পদের চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি অচিরেই নিয়োগ হলে রোগীদের আরো উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। তিনি আরোও বলেন, দূইজনকে পদায় করা হলেও এখনো কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
