জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
চলতি বছরের শুরুতে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়তে থাকে। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে টানা দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। জুনে তা কমে ফের দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে কমে যায় রেমিট্যান্সের গতি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবারও রেমিট্যান্সের গতি বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রমতে, ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বৈধ রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের পুরো সময়ে এসেছিল ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, চলতি মাস ডিসেম্বরের বাকি একদিনে আরও কিছুটা বাড়বে রেমিট্যান্স। সে হিসাবে চলতি বছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি অনুদান আর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এতে রিজার্ভও বেড়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়ে এখন ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের পুরো সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরে ডলারের অফিসিয়াল রেট ৯ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অর্থপাচারও কমেছে। এতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স আর অনুদানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়মানুযায়ী বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৬ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে মাত্র দুই মাস (মার্চ ও জুন) রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলার পার হয়েছিল। আর ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সঙ্গে প্রবাসীদের একাত্মতা প্রকাশ করায় রেমিট্যান্স কমে যায়। আর চলতি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ২৮ দিনেই রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাওয়া মাসের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান করে নিয়েছে। মাসটির এখনও একদিন বাকি রয়েছে। এর আগে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। করোনা মহামারির সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ২৮ দিনেই ২৪২ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। রিজার্ভে বিদেশি অনুদান যোগ হয়েছে। আর এসব কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। আইএমএফের নিয়মানুযায়ী ২১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৬ দশমিক ০৯ বিলয়ন ডলার। তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১১০ টাকা। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য করা মুদ্রানীতিতে ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়। ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ভিত্তি রেট দাঁড়ায় ১১৭ টাকা, যার সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সে হিসাবে রেট পড়ছিল ১১৮ টাকা। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিময় হার বাড়িয়ে আগস্টে ১২০ টাকা করা হয়। যদিও কয়েকদিনের জন্য চলতি মাস ডিসেম্বরে ডলারের রেট ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এখন কমে মৌখিক নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা রেটে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।