ePaper

চট্টগ্রাম বন্দরকে জনবান্ধব করতে চাই যেন সকলে সমান ভাবে ব্যবহার করতে পারে: চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান

আমিনুল হক শাহীন, চট্টগ্রাম ব্যুরো

বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির দ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরকে বলা হয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দুটি অনুষঙ্গ হচ্ছে বন্দর এবং শিপিং। দেশের সমুদ্র বাণিজ্য প্রধানত চট্টগ্রাম বন্দরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কন্টেইনারের প্রায় ৯৮ শতাংশ এবং দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এই বন্দরের ভূমিকা ও অবস্থান। হিন্টারল্যান্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ নৌপথ-সড়ক- রেলপথ-তিন মাধ্যমেই সংযোগ রয়েছে। বন্দরটি কেবল স্থানীয় পণ্য পরিবহনের সেবাই দিচ্ছে না; আঞ্চলিক দেশগুলোকেও সেবা দিচ্ছে। বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ৪/৫ হাজার টিইইউ কন্টেইনার নিয়ে বন্দরে ফিরতে পারবে। এতে পরিবহন ব্যয় কমে আসবে। এছাড়াও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রস্তুত হয়ে গেলে আট হাজার টিইউ পণ্য নিয়ে আঠারো মিটার ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি এখানে আসতে পারবে। এর ফলে পরিবহন খরচ প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন সংযোগ এনে দেবে। একই সাথে পুরো উপমহাদেশ ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এই বন্দর। ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাঁচ আগস্ট বিগত সরকার যখন পতন হয় পুরো দেশ তখন অস্থির পরিস্থিতি। সব প্রতিষ্ঠান বলতে গেলে অচল হয়ে পড়ে। ভেঙে পড়ে সব সিস্টেম। ঠিক সেই মুহূর্তে ১১ই আগস্ট সরকার চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয় রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান কে। ৩৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন জাহাজ প্রতিষ্ঠান ও নৌ-সদর দপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিইডব্লিউ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেনা কল্যাণ সংস্থার ডিজিএম আইএস, কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের চীফ স্টাফ অফিসার হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ও রয়েছে তার। সর্বশেষ বন্দর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বিএন ফিল্ডের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত ও ব্যবহার বান্ধব বন্দর গড়ে তোলার যে আকাক্সক্ষা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বন্দর চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, এরকম একটি অস্থির সময়ের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, যা মোকাবেলা করা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। একটি ছিল বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ সে সময় দেশে পুলিশ বাহিনী সক্রিয় ছিল না। বন্দরে পর্যাপ্ত শ্রমিক ছিল না। বন্দর পাহারায় যেসব আনসার ছিল, পরবর্তী সময় অন্যান্য আনসারদের সাথে তারাও বিদ্রোহ করেছে। এর মধ্যে বন্দরে স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন মহল নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেসব ম্যানেজ করে বন্দরে অভ্যন্তরের নাশকতা ও চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। তা না হলে বন্দর লুটপাট হয়ে যাওয়া সমূহ সম্ভাবনা ছিল। নৌবাহিনী সেনাবাহিনী কোস্টগার্ড গোয়েন্দা সংস্থা বিজিবি সহ যৌথ বাহিনী সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্দরের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার দক্ষতা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম চার মাসে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তার ফলও পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে ৭.৪২% ও কার্গো হ্যান্ডেলিং এ ৩.১১% প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। আমরা সেটাকে ১২ মাসের অর্জন বলছি সেটি মূলত ১১ মাসের। যাতে করে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বন্দরের রাজস্বে। গেল বছর বন্দর কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আয় ২১.৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়াও সেবার মান অক্ষুন্ন রাখি অপ্রয়োজনীয় ব্যায় কমিয়ে আনার ফলে রাজস্ব উদ্ধৃতও বেড়েছে। তিনি আরো বলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায়, নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নেতৃত্বে এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে গতিশীল আধুনিক জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক এবং অধিক ব্যবহার বান্ধব করে তোলায় আমার লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এজন্য যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো করা হচ্ছে। জুলাই পরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিবাচক যেসব পরিবর্তন দেখেছেন তার সবই অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা কে ধারণ করে, অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হয়েছে। বন্দর দেশের সম্পদ। এই বন্দরকে জনবান্ধব করতে চাই, যাতে সকলে বন্দরকে সমানভাবে ব্যবহার করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *