মো. নাজমুল হুদা, খুলনা
খুলনা নগরীর বাজারগুলোতে ভোজ্যতেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। সরকারি ঘোষণার আগেই লিটারপ্রতি গড়ে ২৬ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।
বাজারের চিত্র: শহরের বড়বাজার, নিউমার্কেট ও সন্ধ্যা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৮৬-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিনের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮৭ টাকা, আর পাম অয়েল লিটারপ্রতি ১৭০-১৭৫ টাকা। অথচ মাত্র এক মাস আগেও খোলা সয়াবিন পাওয়া যেত ১৬৮-১৭০ টাকায় এবং পাম অয়েল ১৫০-১৫৪ টাকায়। বড়বাজারে নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি হলেও সন্ধ্যা বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন অবস্থা। সেখানে বোতলজাত সয়াবিনে লিটারপ্রতি ৪ টাকা এবং খোলা সয়াবিনে ১৩ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাম অয়েলের দামে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা রয়েছে।
বিক্রেতাদের যুক্তি: বিক্রেতারা দাবি করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতে দাম বাড়ছে। সেই প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। অনেক ব্যবসায়ী যুক্তি দিয়েছেন, যেহেতু ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভর পণ্য, তাই বিদেশি বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই স্থানীয় বাজার পরিচালনা করতে হচ্ছে। একজন বিক্রেতা জানান, “আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়াইনি। পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে আনতে হচ্ছে। ফলে খুচরায়ও দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।”
ক্রেতাদের ভোগান্তি: তেলের এই অস্বাভাবিক দাম ক্রেতাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা বাজারে তেল কিনতে আসা আবদুল করিম বলেন, “দাম এত বেড়েছে যে এক লিটারই কিনতে পারলাম। না হলে দুই লিটার কেনার ইচ্ছা ছিল। সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনে, তাহলে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ : সম্প্রতি ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিটারপ্রতি ১০ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের টনপ্রতি দাম ১ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে। এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়নি সরকার কিংবা পরিশোধন কোম্পানিগুলো। অথচ ঘোষণার আগেই খুলনার বাজারে দাম চড়া হয়ে ওঠায় প্রশ্ন উঠছে অসাধু ব্যবসায়ীরা কি আগেভাগেই সুযোগ নিচ্ছেন?
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, অধিকাংশ ভোক্তা মনে করছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এক ক্রেতার ভাষায়, “প্রতি মাসেই বাজারে নতুন অজুহাতে দাম বাড়ছে। সরকার যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।”
সর্বোপরি: সরকারি ঘোষণার আগেই ভোজ্যতেলের বাজারে এই অস্থিরতা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেÑ বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনতা এখনো রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে যদি খুচরা ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে দেন, তবে তার চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই। এখন প্রশ্ন হলো সরকার কি সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, নাকি ক্রেতাদের কষ্ট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে?
