রবিউল ইসলাম (সাতক্ষীরা) শ্যামনগর
শ্যামনগর সহ আশপাশের উপজেলায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এসি খ্যাত ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি দেয়াল ঘর। উপজেলা সবত্র গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছর পুর্বেও মাটির ঘর বা দেয়াল ঘরের বাড়ি ছিল। এসব দেয়াল ঘর বা মাটির ঘরে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ঘরের ভিতরে বেশ আরামদায়ক ও শীতল আবেশ ছিল। এর বিপরিতে শীতের দিনে ঘরে গরমের পরিবেশ ছিল। কারন হিসেবে দেখা গেছে, মাটির দেয়াল ঘর এর চতুরপাশ্বের ওয়াল প্রায় দুই থেকে তিন ফুট পুরো ও বিশেষ পক্রিয়ায় মাটির দিয়ে প্রলেপ দেয়ার কারনে এসব ঘরে শীতের বাতাশ বা রুদ্রের তাপ সহজে প্রবেশ করতে না পারায় গরমে শীতল ও শীতে গরম অনুভত হওয়ায় লোকজন বেশ আরামে বসবাস করেছেন। যদিও এটি মাটি দিয়ে তৈরী তারপরও এর নির্মানশৈলী কিন্তু মোটেই সহজ নয়। প্রথমে মাটি কেটে বড় গর্তে ফেলে এটিকে দলাই-মলাইয়ের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে পানি দিয়ে বেশ অনেকদিন কুপিয়ে কুপিয়ে মাটিকে একবারে আঠালো করে পচন পক্রিয়ায় কাচাকাছি নিয়ে অনেকটা তুলতুলে মন্ডার মত করে ঘরের নিদিষ্ট মাপের মধ্যে মাটির কয়েকফুট নীচ থেকে বসিয়ে বিরতি দিয়ে ঘর বানাতেন কারিগড়রা। পরে দেয়াল সাইজ মত কেটে প্রলেপ দিয়ে এটিকে সাজিয়ে তুলতেন। বিত্তবানরা এতে বিভিন্ন নকশা করাতেন। অনেকে মাটির দু-তলাও বানাতেন। এটি অনেক কষ্টকর কাজ ছিল, তবে ঘর বানানোর মেস্তরীর চাহিদাও ছিল ব্যাপক। এক সময় প্রায় সব শ্রেণীর লোকেরাই মাটির ঘরে বসবাস করতেন। অতি ধণাঢ্য লোকেরা টিনের ঘরে বসবাস করতেন। বর্তমানে কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তি পথে মাটির তৈরি ঘর। এর স্থানে উঠছে রড় রড় দালান বাড়ী। তবে গফরগাঁও উপজেলার ভিবিন্ন গ্রামে এখনও অনেক মাটির ঘর রয়েছে। এমনি ঘরে বাস করা ইমদাদুল হক টুটুল ও মর্জিনা দম্পত্তি সহ অনেকে জানান, এ ঘর অনেকটা এয়ারকন্ডিশনের মত শীতে গরম থাকে ও গরমে ঠান্ডার আবেশে তারা বেশ আরামেই আছেন। প্রতি বছর মাটির সাথে ধানের তুষ দিয়ে প্রলেপ দিলে এসব ঘর অনেক বছর (৪০-৫০)পর্যন্ত টিকে থাকে বলেও জানিয়েছেন। মাটির ঘর নির্মানেও বেশ খরচ হয়। বর্তমানে হোসেনপুর-গফরগাঁও সহ আশপাশের উপজেলার গ্রাম এলাকায় মাটির ঘর খুব কম দেখা যায়। এক সময় এ পেশায় অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে মানুষের আর্থ সামাজিক অব¯’ার উন্নতির সাথে সাথে জীবন মানের ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, ফলে মাটির ঘরের ¯’ানে উঠেছে বড়-বড় ইমারত। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালিদের চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতির এয়ারকন্ডিশনখ্যত মাটির ঘর।