গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস’এর সমাবেশে ‘আদিবাসী’ সাঁওতালদের ঐতিহ্য ও ভূমির অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল সোমবার দিবসটি উপলক্ষে উপজেলার নরঙ্গাবাদ হরিণমারি সাঁওতাল পল্লীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন ও সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংহতি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি গনেশ মুরমু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা আরিফুল ইসলাম মিজানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, আদিবাসী পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বাবু রবি দাস, ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নাসেরউদ্দিন মোল্লা, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, আদিবাসী নেতা মিল্টন হেমব্রম, রমিল হেমব্রম, সিপিবির যোগেশ্বর বর্মন, তাজুল ইসলাম প্রধান প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও সাঁওতালরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজ ও তিন সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও করতে পারেনি সরকার। এসময় তারা রংপুর চিনিকলে দেওয়া সাঁওতালদের বাবা-দাদার সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। বক্তারা সাঁওতালদের জমিতে ইপিজেড না করার দাবি জানান। এদিকে, সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে বেসরকারি সংগঠন অবলম্বন উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের সাতানা আলোর ঘর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সাঁওতাল নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আদিবাসী নেত্রী ললিতা মুরমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- অবলম্বনে নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, দৈনিক সময়ের আলো প্রতিনিধি সাংবাদিক কায়সার রহমান রোমেল, সাংস্কৃতিক কর্মী মানিক বাহার, নারী নেত্রী মাজেদা খাতুন, নাজমা বেগম, সেলিনা আক্তার সোমা, আদিবাসী নেতা গৌড় চন্দ্র পাহাড়ি, সুশীল টপ্য, মিলন তিগ্যা, সোনালী মার্ডি, সুরভী মার্ডি প্রমুখ। বক্তারা সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান সময়ে সাঁওতালদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আরেকটি অংশ কাটামোড়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে। উল্লেখ্য, ১৮৫৫ সালে ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়। সেই বিদ্রোহে নিহত হন সাঁওতাল নেতা সিধু-কানুসহ আরও অনেকে। তখন থেকে সাঁওতালরা প্রতিবছর ৩০ জুন সাঁওতাল ‘হুল’ বা বিদ্রোহ দিবস পালন করে আসছে।