ePaper

গভীর রাতে পুড়ে ছাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০ কক্ষ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা ১নং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭ নম্বর শেড আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে সব পুড়ে যায়। এই শেডের ১০টি কক্ষে ১০টি পরিবার বসবাস করতো। তবে মঙ্গলবার রাতে সাতটি পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। আগুনের তাপে তাদের ঘুম ভেঙে গেলেও ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি। আগুনের খবর পেয়ে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দাবি, অন্তত ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের। এসব অসহায় দরিদ্র পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭ নম্বর শেড পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। ঘরের সকল জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনেকে ঘরে থাকা পোড়া জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছেন। কেউ পোড়া জিনিসপত্র সরানোর চেষ্টা করছেন। কেউ নিজের শেষ সম্বল হারিয়ে আহাজারি করছেন। আবার পরিবারের ছোট্ট শিশুশিক্ষার্থী স্তূপ থেকে তার পোড়া বই খুঁজে বের করছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দা ফুলচাঁদ সরদার বলেন, ‘সারা দিন গাছকাটা শেষ করে অনেক রাতে বাড়ি ফিরি। খাওয়া শেষ করে রাত ১টার দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৩টার দিকে শেডে আগুন লাগলে অনেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। আগুনের তাপ শরীরে লাগলে তখন দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।’ আরেক বাসিন্দা শাহেদা খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘আমার ৯ মাস বয়সী একমাত্র সন্তান স্বাধীনকে স্বামী ফারুক শেখ ফেলে চলে যান। তারপর ছেলেকে বিদেশে পাঠাবো বলে অনেক কষ্টে রাস্তায়, মানুষের বাড়ি কাজ করে দুই লাখ টাকার বেশি জমিয়েছিলাম। মঙ্গলবার পাশের গ্রামের ভাইয়ের বাড়ি অনুষ্ঠানে যাওয়ায় রাতে ফিরতে পারিনি। রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে এসে দেখি সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ ফুলচাঁদ সরদার ও শাহেদা খাতুনের মতো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০ পরিবারের সকলের করুণ দশা। ঘর থেকে কেউ কিছুই বের করতে পারেনি। এদিকে, খবর পেয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারের মাঝে ১ বস্তা করে চাল, শুকনো খাবার, কাপড় ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণসহায়তার জন্য তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *