লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুর শহরের ব্যস্ত সড়কে মানুষের ভিড়ের মাঝে একটি নিঃশব্দ উপস্থিতি ৮০ বছর বয়সী এক নারী, কিরণীবালা। ঝুমুর সংলগ্ন নছির আহম্মেদ ভূঁইয়া মিলনায়তনের সামনে খোলা আকাশই এখন তার একমাত্র ঠিকানা। এক সময়ের শিক্ষিতা, সম্ভ্রান্ত ঘরের এই নারী আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, নেই খাবারের নিশ্চয়তা, নেই পরিবার বা আশ্রয়। কিরণীবালার জীবনের শুরুটা এমন ছিল না। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে এমএ পাস করেছিলেন তিনি। বাড়ি রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নে, পিতা উপন্ড ও মাতা সুসান্তের একমাত্র সন্তান তিনি। বিয়ে হয়েছিল নোয়াখালীর মাইজদির গ্রাম্য ডাক্তার হরলালের সঙ্গে। সংসারে নারায়ণ, বাবুল, দুলাল, রাখালসহ ছিল পাঁচ সন্তান। কিন্তু এখন একা, নিঃসঙ্গ। কেউ নেই পাশে। সন্তানরা কোথায়, কেন কাছে নেইÑ এ প্রশ্ন আজও তার চোখে কষ্টের ছায়া ফেলে। প্রায় এক বছর ধরে তিনি এই রাস্তায় বসবাস করছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আশ্রয় হারিয়ে পথের পাশে শুয়ে-বসে দিন পার করছেন। শীত-গরম, বৃষ্টি-রোদÑসবই তার জন্য সমান। খাবার জোটে পথচারীদের দয়ার ওপর নির্ভর করে, আর ওষুধ কিংবা চিকিৎসাÑতা তো এখন বিলাসিতা। এদিকে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শহরের পূজা মণ্ডপগুলোতে উৎসবের আমেজ, আলোকসজ্জা আর আনন্দের ঝলক। কিন্তু কিরণীবালার জন্য নেই নতুন কোনো পোশাক, নেই কোনো আনন্দ। উৎসব তার জীবনে এনে দেয় শুধুই একাকীত্বের বেদনা। স্থানীয়রা বলছেন, একজন নারী, যিনি এক সময় সমাজের গর্ব ছিলেন, আজ তিনি খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেনÑ এটি কেবল একটি মানুষের দুর্দশা নয়, এটি আমাদের সামাজিক ব্যর্থতা। তারা চান, প্রশাসন, সমাজসেবামূলক সংগঠন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যেন দ্রুত তার জন্য আশ্রয়, চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যবস্থা করে। এ সমাজে যেখানে একদল মানুষ বিলাসিতায় ভোগে, সেখানে একজন শিক্ষিত নারী পেটের খাবার ও মাথার ছায়া ছাড়াই বেঁচে থাকেনÑ তা সত্যিই নির্মম। কিরণীবালার জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উন্নয়নের মূল বিচার শুধুমাত্র অবকাঠামো নয়, বরং মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা। একজন কিরণীবালার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা হয়তো খুব কঠিন কিছু নয়, যদি আমরা একটু ইচ্ছা করি। সময় এসেছে কেবল দেখে যাওয়ার নয়Ñ এগিয়ে আসার, পাশে দাঁড়ানোর। যাতে অন্তত জীবনের শেষ সময়টা একটু সম্মান, একটু শান্তি নিয়ে কাটাতে পারেন কিরণীবালা।
