ePaper

‘খাইতেই পারি না আবার ঈদের মার্কেট করমু কেমনে’

কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। শহর ও গ্রামের মানুষজন ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মার্কেটগুলোতে ভিড়। নতুন পোশাক কেনা, খাবারের আয়োজনসহ সব কিছুতেই ঈদের আনন্দ স্পষ্ট। কিন্তু পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী তীরবর্তী কালাইয়া ইউনিয়নের বগী তুলাতলা এলাকার মান্তা পল্লিতে নেই কোনো ঈদের আমেজ।নতুন জামা, ভালো খাবার কিংবা ঈদের দিন একটু আনন্দ করার সামর্থ্যও নেই এই সম্প্রদায়ের মানুষের। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা মান্তা জনগোষ্ঠীর কাছে ঈদ আর অন্য সাধারণ দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাউফলের তেঁতুলিয়া ও বগা নদীর তীর ঘেঁষে মান্তা সম্প্রদায়ের ২০০টিরও বেশি পরিবার বসবাস করে। বেশিরভাগ মানুষই মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। বছরের পর বছর ধরে নদীর মাছ কমে আসায় তাদের আয়ের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। অনেকেই দাদনের বেড়াজালে আটকে আছেন। যা থেকে বের হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ঈদের সময়ও তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে না। অন্যান্য দিনের মতোই তারা নদীতে মাছ ধরতে যায়, সামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করে।বগী তুলাতলা এলাকার মান্তা পল্লির বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৩০) বলেন, নৌকায় ঘরবাড়ি। নৌকায় জীবনযাপন, নৌকায় মরণ। পারি নাই কিছু করতে, পারি নাই পোলাপানের পড়ালেখা করাইতে। খাইতেই পারি না আবার ঈদের মার্কেট করমু কেমনে। দৈনিক ১৫০-২০০ এর বেশি ইনকাম করতে পারি না।মান্তা পল্লির জলিল সরদার (৬০) বলেন, নদীতে বাইচ করি, বাড়ি নাই, ঘর নাই। এহন বাইচ করতে পারি না,অবরোধ দিয়া থুইছে। অবরোধে জাল সুতা সব কিছু লইয়া যায়। মাইয়া পোলার আংটি বন্ধক থুইয়া টাকা আইন্না জাল করি, হেই জাল লইয়া যায়। এতো অভাবে চলতেছি আমরা। যেই অভাবের শুরু আছে শেষ নাই। সামনে ঈদ আইতেছে। আমরা মেয়েছেলে লইয়া ঈদ করমু এমন কোনো ক্ষমতা আমাগো নাই। আমরা নদীতে নদীতে বাইচ করি ,আমরা মান্তা। সরকার আমাগো চাল দেয় না, অন্যদের চাল দেয়। মেয়েছেলে লইয়া খুব কষ্টে আছি আমরা ।

মান্তা পল্লির ১০ বছর বয়সী শিশু রাসেল বলে, ঈদে নতুন কোনো জামাকাপড় কিনতে পারব না। অবরোধের কারণে আমারা জাল বাইতে পারি না। পুলিশে ধইরা লইয়া যাইবে এজন্য আমরা জাল বাইনা। পুরোনো জামা কাপড় পরেই আমরা ঈদ করমু।

১১ বছর বয়সী শিশু আমেনা বলে, আমরা পুরানতা পইরা ঈদ করমু। আমগো কোনো কামাই নাই, রুজি নাই। চাল ভাত কিনমু কি দিয়া। সরকার কিছু দেয় না আমাগো। আমরা পুরানতাই পইরা ঈদ করমু। আমার বাবা-মা গরিব। আমাদের কোনো মজা টোজা কিন্না খাইতে পারি না। আল্লাহ আমাগো কোনো কামাই দেয় না যে আমরা কিন্না খামু।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন যে এখন মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় চলছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা আমাদের নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এবং প্রকৃত জেলে যারা তাদেরকে সরকার ভিজিএফের চাল সহায়তা দিয়ে থাকে। এই নিষিদ্ধ যে সময়টা তারা যখন মাছ না ধরতে পারে তখন সরকারের এই ভিজিএফের মাধ্যমে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। এটা সরকারের পক্ষ থেকে ভালো সাপোর্ট। যার ফলে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এটার ওপর নির্ভরশীল যে জেলে তারাও যেন জীবন নির্বাহ করতে পারেন সেই সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১০ কেজি করে চাল ঈদের শুভেচ্ছা উপহার পাবে তারা। বিশেষ করে মান্তা সম্প্রদায়ের যারা আছে তারা যেন এর আওতায় আসে সে ব্যাপারে আমাদের নজর থাকবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *