ePaper

কেসিসি’র ৭১৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা, কর নয়, উন্নয়ন চাইÑনাগরিক প্রত্যাশায় নতুন অর্থবছরের বাজেট

Oplus_131072

মো. নাজমুল হুদা, খুলনা

খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগর ভবনের শহিদ আলতাফ মিলনায়তনে বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসি প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার বাজেট উন্মোচন করেন। প্রশাসক স্পষ্ট করে বলেন, “নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি।” বরং বকেয়া পৌরকর আদায় ও নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করে ব্যয় নির্বাহ করা হবে।

আগের বাজেটের বাস্তবতা : গত অর্থবছরে বাজেট ছিল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আয় হয়েছিল মাত্র ৬২ শতাংশ। তাই এবার বাজেট করা হয়েছে বাস্তবসম্মতভাবে, যেখানে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নাগরিক সেবা ও উন্নয়নে।

নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া : বাজেট ঘোষণার পর খুলনা নগরীতে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। খানজাহান আলী রোডের ঔষধের দোকান মালিক আতিকুজ্জামান লনি বললেন, নতুন কর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে শহরের রাস্তা-ড্রেনের অবস্থা যদি না বদলায়, তাহলে বাজেটের অঙ্ক দিয়ে কোনো লাভ নেই। হাজী মুহসিন রোডের সজিবুর রহমান সজীব বলেন, প্রতি বর্ষায় খুলনা নগরের অধিকাংশ বাড়ির নিচতলায় পানি জমে ঘরে বসবাস করা যায় না। বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি শুনে ভালো লাগছে, কিন্তু আমরা চাই এর বাস্তব প্রয়োগ। পূর্ব বানিয়াখামারের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শেখ বাদশা বলেন, প্রত্যেক বর্ষার মৌসুমে এই খুলনা শহরের অধিকাংশ বাড়ি ঘরের মধ্য পানি জমে যায় পাশাপাশি দু’একটা রাস্তা বাদে সকল রাস্তায় হাঁটু সমান পান জমে যায় নগরবাসী পড়ে যায় অসহনীয় যন্ত্রণায়। প্রতিবছরই বড় বড় বাজেট পাস হয় শুধুই শুনি কিন্তু আমাদের এই সমস্যা সমাধান কখনো কোনোদিনই হয়নি। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ : নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. শামীমা আক্তার মনে করেন, বাজেটে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা ইতিবাচক। প্রতি বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়। এবার বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকায় আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব বলে আশা করি। অন্যদিকে পরিবেশ কর্মী সজল দাশ বললেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন প্রকল্প ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ জরুরি। খুলনা উপকূলীয় শহর, এখানে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘমেয়াদে শহর টিকে থাকবে।

বাজেটে কী থাকছে : সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিধন স্বাস্থ্যসেবা ও নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খেলাধুলা উন্নয়ন, শহিদদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ।

উন্নয়ন প্রকল্প : চলমান ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ রেসপন্সে ৫০ কোটি টাকা, ইউনিসেফের সহায়তায় ওয়াশ প্রকল্পে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা অন্যতম। জাতীয় এডিপিভুক্ত প্রকল্পেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।  প্রশাসক ফিরোজ সরকার বললেন, “এই বাজেটকে আমরা উন্নয়নমুখী করেছি। নাগরিক জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানই মূল অগ্রাধিকার।” তবে সাধারণ মানুষের অভিমতÑকাগজের অঙ্ক নয়, বাস্তবের উন্নয়নই সবচেয়ে জরুরি। শহরের রাস্তায় জল জমে না থাকলে, ডেঙ্গুর ভয়ে আতঙ্কিত হতে না হলে আর বর্জ্যে নোংরা না হলে তবেই বাজেট সফল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *