রাজীব চৌধুরী, কেশবপুর
যশোরের কেশবপুর খ্রীষ্টিয়ান আউটরীচ সেন্টার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর পক্ষে হোস্টেল সুপার জেসিকা সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় খ্রীষ্টিয়ান আউটরীচ সেন্টার ফাউন্ডেশনের হল রুমে সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে জেসিকা সরকার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন অদ্য মার্চ ১৮ সোমবার আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকায় খ্রীষ্টিয়ান আউটরীচ সেন্টার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর সাহা পাড়াস্থ খ্রীষ্টিয়ান চার্চে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা ও মৃত রাজেরুং ত্রিপুরার এলাকার আরও তিন ছাত্রীর অভিভাবক তাদের সাথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং গেট না খোলায় তারা ঐ গেট ডিঙ্গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরবর্তিতে কেশবপুর থানা পুলিশ এবং কেশবপুর সেনা ক্যাম্পের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছাত্রী হোস্টেলের তিনজন মেয়ে জোচিন্তা ত্রিপুরা, স্বস্তিকা ত্রিপুরা এবং রেবেকা ত্রিপুরাকে তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনা মার্চ ১৮, ২০২৫ রোজ সোমবার ঘটলেও ঘটনার সুত্রপাত হয় মার্চ ১৪ শুক্রবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৭:০০ সাতটায়। ঐদিন ছাত্রী হোস্টেলের মেয়ে রাজেরুং ত্রিপুরা (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটায় ছাত্রী হোস্টেলের সকল মেয়েরা পড়ার টেবিলে পড়তে আসলেও রাজেরুং ত্রিপুরাকে দেখতে না পেয়ে সুরভী বিশ্বাস এবং রত্নমালা ত্রিপুরা হোস্টেল সুপার মিসেস জেসিকা সরকারকে জানায়। পরবর্তিতে সুরভী বিশ্বাস রত্নমালা ত্রিপুরা এবং হোস্টেল সুপার সকল জায়গায় খোজাখুজির পর তার রুমে খুজতে যায়। তার রুমে খুজতে গিয়ে দেখতে পায় যে তার রুম ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কির পর দরজা ভিতর থেকে না খুললে সন্দেহ তৈরী হয়। সাথেসাথে হোস্টেল সুপার তার কাছে রক্ষিত চাবি দ্বারা উক্ত দরজার তালা খুলে দেখতে পায় রাজেরুং ত্রিপুরা গলায় জর্জেটের কালো উড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। সাথেসাথে তারা একযোগে আর্ত চিঃকার করে এবং সকলে ছুটে উক্ত রুমে প্রবেশ করে এবং তার ঝুলন্ত দেহ জীবিত অবস্থায় নামানো হয়। সাথেসাথে তাকে ভ্যান যোগে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরী বিভাগের ডাক্তার তাকে অক্সিজেন প্রদান এবং ইসিজি করেন। আনুমানিক রাত আটটায় কর্তব্যরত ডাক্তার রাজেরুং ত্রিপুরাকে মৃত ঘোষনা করেন। রাজেরুং ত্রিপুরাকে মৃত ঘোষনার সাথেসাথে খ্রীষ্টিয়ান আউটরীচ সেন্টার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর পক্ষে হোস্টেল সুপার কেশবপুর থানাকে অবগত করেন এবং একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। কেশবপুর থানা কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নিকট থেকে লাশ গ্রহন করে ১৫.০৩.২০২৫ তারিখে রোজ শনিবার তা পোস্ট মর্টেমের জন্য যশোর সদর হাসাপাতালে প্রেরন করে। উক্ত লাশের পোস্ট মর্টেম হওয়ার পর তা সদর হাসপাতালে হিমাগারে রাখা হয়। পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত হাতে পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় থেকে অনেকবার ফোন করা হলেও দুর্গম এরিয়া হওয়ায় মৃত রাজেরুং ত্রিপুরার বাবা মার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। অবশেষে মার্চ ১৫, ২০২৫ সকালে থানচী থানার অধিবাসীকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা প্রদান করত: মৃত রাজেরুং ত্রিপুরার বাবা-মা এবং মামাকে লোক মারফত জানানো হয়। পুলিশ প্রশাসনও অনেকবার চেষ্টা করেও রাজেরুং ত্রিপুরার বাবা মার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। ঘটনার দিন লুইস বিশ্বাস, সুব্রত বিশ্বাস, জোয়াকিম বিশ্বাস, স্টিফেন বিশ্বাস, তপন বিশ্বাস, অসিম সরকার, প্রদ্বীপ সিংহ সহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে ঘটনার সময় নেতৃত্বদান করতে দেখা যায়। সুত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায় যে, বান্দরবন থেকে আসা মৃত রাজেরুং ত্রিপুরার পিতাকে মদদ দাতারা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সন্তানের লাশ দেখার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি। মৃত রাজেরুং ত্রিপুরার মরদেহ তার বাবা কাছে হস্তান্তর করা হয়।