ePaper

কুষ্টিয়ায় পুত্র সন্তান জন্ম দিল ধর্ষণের শিকার শিশু গ্রেপ্তার আপন চাচা

আহসান বিশ্বাস, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় ধর্ষণের শিকার ১৩ বছর বয়সী একশিশু একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে ওই শিশুর আপন চাচা উদয় কর্মকারকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নবজাতক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় ভুক্তভোগী শিশুটি। হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা ধর্ষণের শিকার ওই শিশু। এরপর ওই দিনই সে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামি শ্রী উদয় কর্মকার (২৬) সম্পর্কে আমার আপন ছোট ভাই। আনুমানিক ১০ মাস পূর্বে আমি আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও আসামিকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করি। ২০২৪ সালের ২ মে রাত্র আনুমানিক দেড়টার সময় আমার পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আসামি ওই ভাড়াবাসায় আমার কন্যার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তার মুখ চেপে ধরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ৩ মাস অতিবাহিত হলে আমরা ওই বাসা ছেড়ে দিয়ে কুষ্টিয়া শহরে অন্য ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করি। মঙ্গলবার দুপুরে আমার নাবালিকা কন্যা (১৩) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে তার মাকে জানায়, আসামি বর্ণিত তারিখসহ বিভিন্ন সময় পূর্বের ভাড়াবাসায় অবস্থানকালে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার জোর পূর্বক ধর্ষণ করেছে। আসামির ভয়ে সে কাউকে কিছু বলেনি। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা বলেন, আসামি আপন ভাইয়ের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছে। তবে বিষয়টি সমঝোতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এ মামলায় পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা সমঝোতায় সহযোগিতা করছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নার্গিস খাতুন বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী মেয়েটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। পরের দিন এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই দিনই মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর জবানবন্দি ও রিমান্ডের আবেদন করা হবে। সমঝোতায় সহযোগিতা ও টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে হচ্ছে। আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জেসমিন পারভিন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে শিশুটি হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। এরপর দুপুর একটা ১০ মিনিটের দিকে নরমাল ডেলিভারিতে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। পরে আনুমানিক বিকালের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তারা চলে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, ‘প্রথমে সবকিছু গোপন করে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর নরমাল ডেলিভারিতে পুত্র সন্তান জন্ম দেয় শিশুটি। ওই দিনই হাসপাতাল থেকে তারা পালিয়ে যায়। এরপর এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি জানাজানি হলে ওইদিনই তাকে গাইনি বিভাগে ভর্তি হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায় তারা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বলেন, এটা একটা পারিবারিক ব্যাপার। আমরা সমঝোতা করে নিচ্ছি। নিজেদের ব্যাপার এ জন্য পুলিশের মাধ্যমে সমঝোতা করে নিচ্ছি। এ নিয়ে বেশিকিছু বলতে চাচ্ছি না। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *