জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
খাদ্য উৎপাদন ও মজুতে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করলেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো পিছিয়ে আছে ক্রয়ক্ষমতা ও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায়। গত অর্থবছরে দেশে পাঁচ কোটি টনের বেশি দানাদার খাদ্য উৎপাদনের নতুন মাইলফলক ছোঁয়া গেলেও মূল্যস্ফীতি ও ভেজাল খাদ্যের চাপে সাধারণ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এখনো ঝুঁকিতে। আবার খাদ্য উৎপাদন ও স্থিতিশীলতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের কিছুটা উন্নতি হলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় উন্নতি হচ্ছে না। ফলে এই চার মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যনিরাপত্তার পুরো বিষয়টিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবার তাদের মোট আয়ের অন্তত অর্ধেক খাবারের পেছনে ব্যয় করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে খাদ্যের উৎপাদন বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। আবার অধিক ফলনের ঝোঁকে দেশে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে, যে কারণে খাদ্যের নিরাপত্তা দিন দিন কমছে। যদিও গত এক বছরে দেশে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যের মজুত উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে, যা খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমিয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
কৃষকরা ধীরে ধীরে দেশীয় জাত থেকে সরে এসে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কারণে প্রথমবারের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। ওই বছর চার কোটি ছয় লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছিল, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেশি। এদিকে সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) উৎপাদন আরও ১৩ লাখ টন বেড়ে ৪ কোটি ১৯ লাখ টন হয়েছে। ওই বছর ২ কোটি ২৬ লাখ টন বোরো, ১ কোটি ৬৫ লাখ টন আমন ও ২৮ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে।
এই অর্থবছরে গম উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ টন আর ভুট্টা ৭৪ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ দুই ফসলের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১১ লাখ টন ও ৬৭ লাখ টন। ফলে এ তিন ফসল মিলে গত অর্থবছরে দেশে মোট দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৩ লাখ টন। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪ কোটি ৮৭ লাখ টন। ফলে প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে পাঁচ কোটি টনের বেশি দানাদার খাদ্য উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, মূলত খাদ্য উৎপাদন বাড়াচ্ছে চাল ও ভুট্টা। এ দুই ফসলের ক্ষেত্রে কৃষকরা আধুনিক জাতের চাষাবাদে ঝুঁকেছেন। উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ফসল চাষ করছেন।
দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও দুই-তিন ফসলি জমি চাষের কারণে আবাদি জমি বেড়েছে।
খাদ্যশস্যের মজুত ইতিহাসে সর্বোচ্চ
ভালো উৎপাদনের পরও অন্তর্বর্তী সরকার চাল ও গম আমদানি অব্যাহত রেখেছে। যে কারণে সরকারি পর্যায়ে সবোর্চ্চ মজুত তৈরি হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখন সরকারের কাছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯ হাজার টন চাল, ৪ হাজার টন ধান ও ৫৪ হাজার টন গম।
এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের মজুত এখন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এটি শেষ ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের আগের রেকর্ড ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টনকে ছাড়িয়ে গেছে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, বোরোর ভালো উৎপাদন, রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ এবং বাজারের দামের সঙ্গে সরকারি ক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্যের ফলেই এই উল্লেখযোগ্য মজুত সম্ভব হয়েছে। মজুত আরও বাড়াতে সরকার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৫ লাখ টন চাল এবং ৪ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে। এদিকে এ বছর প্রায় ১৭ লাখ ৩ হাজার টন বোরো সংগ্রহ করে নতুন রেকর্ড করেছে সরকার। ধান সংগ্রহ করেছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার টন। এ কারণেও সরকারের মজুত বেড়েছে।
